ভালোবাসার টানে আমেরিকা থেকে কলকাতার ফুটপাতে ৯ বছর!

অসুস্থ গ্রেগরিকে নিয়ে সারাদিন ফুটপাতে বসে থাকেন ন্যান্সি। রোদে জলে অসুস্থ স্বামীর মাথায় শীর্ণ হাতে ধরে থাকেন একটি ছাতা। পথচলতি মানুষজন কখনো আড়চোখে তাকান দু’জনের দিকে। কিন্তু তারা কি বুঝতে পারেন, কী কী ঝড় বয়ে গিয়েছে দু’জনের ওপর দিয়ে?

এ এক অবিশ্বাস্য প্রেম কাহিনি। প্রেমিক সুদূর আমেরিকার। আর প্রেমিকা কলকাতার। দু’জনের মাঝে শুধু ভৌগোলিক দূরত্বের নয়, আরো অজস্র বাধা। তবুও তারা একে অন্যকে ছেড়ে যেতে রাজি নন।

ঘটনার সূত্রপাত প্রায় ৯ বছর আগে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা ৫১ বছর বয়সি মাইকেল গ্রেগরির সঙ্গে ইন্টারনেট মারফৎ আলাপ হয় কলকাতার খিদিরপুরের মেয়ে রানি ন্যান্সির। আলাপ কিছুদিনের মধ্যেই পরিণত হয় গভীর প্রণয়ে। হৃদয়ের টানে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কলকাতায় পাড়ি দেন মাইকেল। সদর স্ট্রিটে একটি গেস্ট হাউসে ঘর ভাড়া নেন। কিছু‌দিন পরে ন্যান্সির সঙ্গে বিয়ে হয় মাইকেলের। বিয়ের পরে গ্রেগরি আর ন্যান্সি একসঙ্গে ন্যান্সিদের ভাড়া বাড়িটিতেই থাকতে শুরু করেন। কিন্তু বাধা আসে ন্যান্সির বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে। তারা যে বাড়িতে থাকতো সেই বাড়িওলা তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। নতুন লড়াই শুরু হয় তাদের জীবনে। আবার কলতায় ফিরে আসেন তারা। সামান্য বেতনের অনলাইন ডাটা এন্ট্রির একটি কাজ নেন গ্রেগরি। প্রবল অর্থকষ্ট নেমে আসে তাদের জীবনে। কিন্তু সেই অবস্থাতেও পরস্পরকে ছেড়ে যাননি তারা।

বর্তমানে গ্রেগরি আর ন্যান্সির ঠাঁই হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে। মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ায় গ্রেগরিকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম-এ। কিন্তু তাকে পরীক্ষা করে ডাক্তারেরা বলেন, ফুটপাতে পড়ে থাকলে গ্রেগরিকে সুস্থ করা সম্ভব নয়।

এখন অসুস্থ গ্রেগরিকে নিয়ে সারাদিন ফুটপাতে বসে থাকেন ন্যান্সি। রোদে জলে অসুস্থ স্বামীর মাথায় শীর্ণ হাতে ধরে থাকেন একটি ছাতা। পথচলতি মানুষজন কখনো আড়চোখে তাকান দু’জনের দিকে। কিন্তু তারা কি বুঝতে পারেন, কী কী ঝড় বয়ে গিয়েছে দু’জনের ওপর দিয়ে? পারেন কি পারেন না, তাতে গ্রেগরি আর ন্যান্সির কিছু যায় আসে না। ভালবাসার বন্ধনে বাধা পড়েছেন দু’জনে, কোনো অবস্থাতেই এক-এ অন্যকে ছেড়ে যাবেন না— এই প্রতিজ্ঞায় তারা আবদ্ধ।-এবেলা



মন্তব্য চালু নেই