ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকের গলায় জুতার মালা

গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আর এই ভালোবাসা দিবসেই ভালোবাসার অপরাধে শাস্তি পেলো আদিবাসী এক দম্পতি। শুধু তাই নয়, তাদের গণপিটুনি দিয়ে মাথার চুল কেটে, মুখে চুন-কালি মাখিয়ে জুতার মালা গলায় ঝুলিয়ে ঘুরানো হয় গ্রামের পথে পথে।

ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে ঘটেছে নিষ্ঠুর ও বর্বর ওই ঘটনাটি। এ ঘটনায় চারিদিকে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, সব রকম আপত্তিকে উপেক্ষা করে আট বছর আগে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন ওই পরিমল এবং শীতলা। সন্দেশখালির আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের মাতব্বরদের চোখে এটাই চরম অপরাধ। আট বছর আগে করা সেই অপরাধের শাস্তি দেয়া হলো ভালবাসার দিনে। এ দিনই দীর্ঘদিন বাদে বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি থানার গ্রামে ঝুপখালি ফিরেছিলেন দু’জন।

ভালবাসার মাসুল হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতি উপরে নির্বিচারে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চালান হয় অমনবিক অত্যাচার। তাদের চুল কেটে, মাথায় চুন ও কালি মাখিয়ে, গলায় জুতোর মালা পরিয়ে এই অপরাধের সবক শেখান গ্রামবাসীরা।

অভিযোগ, বাদ যাননি গ্রামের মহিলারাও। ভালবেসে ঘর বাঁধার অপরাধে শীতলার উপর নানা অত্যাচার চালান তারা। দেখা মেলেনি না পুলিশ-প্রশাসনের।

২০০৯ সালে আয়লার পরে চাষবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শীতলার বাবা দিনমজুরের কাজ করতে তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে। একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রতিবেশী পরিমল সরদারও গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গেই। সেখানে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। সম্পর্কের কথা জানাজানি হতে মেয়ে শীতলাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন তার বাবা বিদেশ সর্দার।

শীতলা-পরিমল অবশ্য একে অপরকে ভুলতে পারেননি। সবার অমতেই তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। কয়েক দিন পরে গ্রামে ফিরে এলে তাদের নিয়ে সালিশি বসানো হয়। কিন্তু বিচারের আগেই আবার গ্রাম ছেড়ে পালান তারা।

এর পরে প্রায় ৮ বছর কেটে যাওয়ায় কিছুটা সাহস করে শনিবার রাতে নিজেদের গ্রামে ফিরে আসেন ওই দম্পতি। কিন্তু পরিস্থিতি যে একেবারেই বদলায়নি, গ্রামে ফিরতেই টের পেলেন।

এবারে আর পরিমল-শীতলাকে পালানোর সুযোগ দেননি গ্রামবাসীরা। রবিবার গ্রামে তাদের আটকে রেখে বসানো হয় সালিশি সভা। অভিযোগ, গ্রামের মহিলারাই এগিয়ে এসে শাস্তি নির্ধারণ করেন। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের বিচার মেনে দু’জনকেই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়।

অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরে এমন অমানিক অত্যাচার চললেও স্থানীয় বেড়মজুর দু’নম্বর পঞ্চায়েত বা পুলিশ ওই দম্পতিকে উদ্ধারের কোনও চেষ্টাই করেনি।



মন্তব্য চালু নেই