ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও এখন এতিমদের ইফতার জোগাতে পারছেন না সেই মানুষটি!

ইফতারিতে শুধু মুড়ি আর পানি। মাগরিবের নামাজের পর সবজি ভাত ও অথবা খিচুরি এবং ভোররাতে সবজি অথবা ডাল আলু ভর্তা। এভাবে চলছে রাজশাহীর বাঘার সরের হাট গ্রামের এতিমখানার এতিমদের রোজা।

‘ইফতারিতে আমরা কি ভালো খাবার পাবো না? এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন না এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন ওরফে ডা. শমেস ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা। উত্তর দিবেনই বা কি করে। এতিমদের ভরণপোষণ দিতে গিয়ে তারা নিজেরাই এখন ভূমিহীন। তাদেরও ঠাঁই হয়েছে এই এতিমখানায়।

4_2

রাজশাহী শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা সরের হাট গ্রাম। বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের এই গ্রামে ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. শামসুদ্দিন সরকার ওরফে ডা. শমেস এবং তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা গড়ে তোলেন সরের হাট কল্যাণী শিশু সদন।

মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন তার স্ত্রীর মোহরানা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ১২ শতাংশ জমি কিনে চালু করেন এই এতিমখানা। এতিমখানার আয় বলতে মেহেরুন্নেছার সেলাই ও গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে শমেস ডা. এর চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ।

এতিমদের পালতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ি ভিটা বিক্রি করে নিজেই পরিবার নিয়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উঠেন এতিমখানায়। স্ত্রী মেহেরুন্নেছা শিশুদের দেখাশোনা ও তাদের জন্য রান্নাবান্না করেন তিন সন্ধ্যা। এখন মেহেরুন্নেছা সেখানকার একজন সেবিকা। বিনিময়ে দুটো খেতে পান মাত্র। বর্তমানে ১৫২ জন এতিমসহ স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবার নিয়ে সবাই একসাথে দিন কাটান। পবিত্র রমজান মাসে এই শিশু সদনে চলছে আর্থিক মন্দা।

xZqZulY

রমজানে ভালো খাবারের আশা নিয়ে পরিচালক এখন বেকায়দায় পড়েছেন। অবুঝ এতিম শিশুরা তাকে প্রতিনিয়তও বলছেন আমরা কি রোজাতেও ভালো খাবার পাবো না?

এতিমখানার পরিচালক শামসুদিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রমজান মাসে কত মানুষই তো কত ভালো ভালো খাবার ও জামা কাপড় কিনছেন। কিন্তু তার সন্তানদের জন্য তিনি এখনও কিছুই করতে পারেননি।

izT5fWf

এতিমদের মধ্যে এবার এসএসি পাস করেছেন ১৭ জন। এদের মধ্যে একজন গোল্ডেন এ প্লাস, ১০ জন এ প্লাস অন্যান্যরা বিভিন্ন গ্রেডে পাস করেছেন। আর ১২ জন এতিম এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। জীবিকার তাগিদে কিছু এতিম সন্তান কাঠ মিস্ত্রির কাজ ও সেলাই মেশিনের কাজ করে থাকে। সেখান থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে খাদ্যের যোগান ও পড়ালেখার খরচও বহন করা হয়। সরের হাট কল্যাণী শিশু সদনটিতে ৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের শিশুরা রয়েছে।

cRnmaCg

ডা. শামসুদ্দিন সরকার বলেন, ১৯৭১ সালে বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স) মুজিব বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে দেখি অনেক শিশু মা-বাবা হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে কিভাবে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় সেই চিন্তা থেকে এই শিশু সদনটি প্রতিষ্ঠা করি। শুরুতে মুক্তিফোজ পরিবারের ৫০ জন এতিম সন্তানকে নিয়ে গড়ে তুলি সরের হাট কল্যাণী শিশু সদন। তারপর ক্রমান্বয়ে এতিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এখানে এতিম শিশুর সংখ্যা ১৫২ জন। এরমধ্যে ছেলে ১১৫ জন এবং মেয়ে ৩৭ জন। জন্মলগ্ন হতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শিশু সদনে আর্থিক অবস্থা শোচনীয় ছিল। ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী এতিমশিশুদের নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে মুষ্ঠি ভিক্ষা করে এটি পরিচালনা করেছি।

jbJjGCP

কারিতাস আঞ্চলিক কার্যালয় শিশু সদনটির পরিস্থিতি দেখে ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে একটি গৃহ নির্মাণ করে দেয়। এছাড়া অস্থায়ীভাবে আর্থিক সাহায্য দেয় কারিতাস। পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমে সদনটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ায়। বর্তমানে সরকারি অনুদান, জনগণের দান, প্রবাসী বাঙ্গালী সংস্থার অনুদান দ্বারা এই শিশু সদনটি পরিচালিত হচ্ছে। এই শিশু সদনটি পরিচালনার জন্য মাসিক খরচ হয় ২ লাখ টাকারও অধিক। অনুদান যা পাওয়া যায় তাতে বছরে ৬ মাস শিশুদের প্রতিপালন করা যায়। বাকি ৬ মাস অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। বিভিন্ন দোকান হতে বাকি করে খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করা হয়। অনুদানের টাকা হাতে পেলে বাকি পরিশোধ করে পূনরায় আবার বাকি শুরু করতে হয়।

7UhEtRu

প্রতিবছর ঋণ থাকে প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকা। বিগত ৩২ বছরে পৈত্রিক ১৮-১৯ বিঘা জমি বিক্রয় করে এতিমদের রক্ষা করে চলেছেন তারা। এজন্য তিনি পেয়েছেন সাদা মনের মানুষ খেতাব। তাতে তো আর এতিমদের পেট ভরে না। চলতি রমজান মাসে চরম বেকায়দায় রয়েছেন পরিচালক শমেস। তিনি বিত্তবানদের কাছে এতিমদের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

পরিচালক শামসুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে-01718542454.



মন্তব্য চালু নেই