ভুল ছবির জন্য অস্কার পেয়েছেন যে ১০ অভিনেতা

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হল বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় আসর ‘অস্কার’। এই বছর প্রথমবারের মত অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার খেতাব পেয়েছেন ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ছয়বার অস্কারে মনোনয়ন পাওয়ার পর অবশেষে সেরা অভিনেতার সম্মান পেয়েছেন তিনি। আর তার জয়ে হলিউড সহ বিশ্ব চলচ্চিত্রের বহু তারকার মুখে হাসি ফুটেছে। সকলের মতে, অনেক আগেই অস্কার পাওয়ার দাবিদার ছিলেন এই অভিনেতা। কিন্তু আপনারা জানেন কি, এর আগে অনেক অভিনেতা ভুল ছবির জন্য জিতে নিয়েছিলেন এই পুরস্কার! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যিই অতীতে ঘটেছে এমন ঘটনা।
এমন হয়েছে, সেই অভিনেতারা তাদের সেরা অভিনয়টি করেছিলেন একটি ছবিতে, কিন্তু তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয় তাদের অভিনীত অন্য ছবিটির জন্য। ভুল ছবির জন্য অস্কার পেয়েছেন এমন ১০ অভিনেতাদের তালিকা নিয়ে এই প্রতিবেদন।

রবিন উইলিয়াম
কমেডি চরিত্রের জন্য বিখ্যাত অভিনেতা রবিন উইলিয়াম। ‘গুড উইল হান্টিং’ ছবির জন্য ১৯৯৮ সালে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার জন্য অস্কার জিতে নিয়েছিলেন তিনি। অথচ সমালোচকদের মতে, এই ছবিটির জন্য নয়, এই অভিনেতার পুরস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল ১৯৯১ সালে নির্মিত ‘দ্য ফিশার কিং’ ছবির জন্য। টেরি গিলিয়াম নির্মিত কমেডি সিনেমা ‘দ্য ফিশার কিং’ সেবছর মনোনয়ন পায় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য। রবিন উইলিয়াম সেবার সেরা অভিনেতার পুরস্কার না পাওয়ায় হতাশ হয় সিনেমাটির দর্শক ও ভক্তরা। এর সাত বছর পর ‘গুড উইল হান্টিং’ ছবির জন্য তিনি এই খেতাব লাভ করেন।

জ্যাক লেমন
১৯৭৩ সালে ‘সেভ দ্য টাইগার’ ছবির জন্য অস্কার পুরস্কার জিতে নেন অভিনেতা জ্যাক লেমন। কিন্তু তার ভক্তরা এর ১৩ বছর আগেই তার অস্কার প্রাপ্তি আশা করেছিলেন। ১৯৬০ সালে জ্যাক লেমন অভিনয় করেন ‘দ্য অ্যাপার্টমেন্ট’ ছবিতে। দর্শক সমালোচকদের মতে সেই ছবিতে অভিনেতা সেরা অভিনয় করেছিলেন।

হেনরি ফোন্ডা
১৯৮১ সালে মুক্তি পায় হেনরি ফোন্ডা অভিনীত ‘অন গোল্ডেন পন্ড’ ছবিটি। এই ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে সেবছর অস্কার জিতে নেন এই অভিনেতা। এর আগে ১৯৩৯ সালে এই তারকা অভিনীত ‘গ্র্যাপস অব রেথ’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা পান। কিন্তু এর জন্য সেবছর অস্কারে মনোনয়নই পান নি এই অভিনেতা। এর ৪০ বছর পর ‘অন গোল্ডেন পন্ড’ ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার ঘরে তুলে নেন।

সিন পেন
অভিনেতা সিন পেন ২০০৮ সালে ‘মিল্ক’ ছবিতে অভিনয়ের কারণে সেরা অভিনেতার অস্কার লাভ করেন। নিঃসন্দেহে সেই ছবিতে তিনি তার সেরা অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তার ভক্ত দর্শকেরা এমন মনে করেন না। তাদের মতে এর আগেও তিনি অস্কার জয়ের মত কাজ উপহার দিয়েছিলেন দর্শকদের। সিন পেন ১৯৯৬ সালে অভিনয় করেন ‘ডেড ম্যান ওয়াকিং’ ছবিতে। সেবছর এই ছবির জন্য অস্কার পান ছবির অভিনেত্রী সুসান স্যারান্ডোন। তবে অনেকে মনে করেন, সেবার সেরা অভিনেতা হিসেবে সিন পেনের অস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল।

জেফ ব্রিজেস
২০০৯ সালে মুক্তি পায় ‘ক্রেজি হার্ট’ ছবিটি। এতে অভিনয় করেন অভিনেতা জেফ ব্রিজেস। এর পরের বছর ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত অস্কারের আসরে তিনি পান সেরা অভিনেতার পুরস্কার। ভক্ত দর্শকদের মতে ২৬ বছর আগেই অস্কার জয়ের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন অভিনেতা জেফ ব্রিজেস। এর আগে ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘স্টারম্যান’ ছবির জন্য অস্কারে মনোনয়ন পান এই অভিনেতা। কিন্তু সেবছর পুরস্কার পান নি তিনি।

মাইকেল কেইন
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে ১৯৯৯ সালে অস্কার জেতেন অভিনেতা মাইকেল কেইন। তার অভিনীত ‘সাইডার হাউজ রুলস’ ছবির জন্য এই পুরস্কার ঘরে তুলে নেন তিনি। তবে এর আগেও তিনি তার সেরা অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্লেউথ’ ছবিতে। সেই ছবিতে অভিনয়ের ২৭ বছর পর অস্কারের মত সেরার সম্মান অবশেষে ১৯৯৯ সালে পান অভিনেতা মাইকেল কেইন।

রাসেল ক্রো
‘গ্ল্যাডিয়েটর’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা রাসেল ক্রো। ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এর আগে এই অভিনেতা কাজ করেন ‘অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড’ ছবিতে, যা মুক্তি পায় ২০০১ সালে। ছবিটি সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে সেবছর অস্কার মূর্তি জিতে নেয়। কিন্তু অদেখা থেকে যায় রাসেল ক্রোর মেধাবী অভিনয়। অভিনেতার ভক্তদের দাবি, ২০০১ সালে সেরা অভিনেতার যোগ্য দাবিদার ছিলেন রাসেল ক্রো।

ডেনজেল ওয়াশিংটন
২০০১ সালে মুক্তি পায় ডেনজেল ওয়াশিংটন অভিনীত ‘ট্রেনিং ডে’ ছবিটি। আর সে বছর এই সিনেমাটির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান তিনি। ১৯৯২ সালে এই অভিনেতা ‘ম্যালকম এক্স’ ছবিতে অভিনয় করেন। ম্যালকম এক্স একজন মার্কিন মন্ত্রী ছিলেন, আর এই বায়োপিকে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন ডেনজেল। কিন্তু সেই সিনেমার কাজের মূল্যায়ন পান নি এই অভিনেতা। এর ১০ বছর পর ‘ট্রেনিং ডে’তে অভিনয় করে অবশেষে অস্কার জয় করেন তিনি।

হামফ্রে বোগার্ট
১৯৫২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দ্য আফ্রিকান কুইন’ ছবির জন্য অস্কার জিতেছিলেন অভিনেতা হামফ্রে বোগার্ট। এর ১০ বছর আগে তিনি অভিনয় করেছিলেন রোমান্টিক ড্রামা ঘরানার ছবি ‘কাসাব্লাংকা’য়। ছবিটি সেবছর সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে জিতে নেয় অস্কারের সম্মান। অথচ সেরা অভিনেতা হিসেবে যোগ্য প্রার্থী ছিলেন হামফ্রে বোগার্ট।

আল পাচিনো
এই অভিনেতা অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ‘গডফাদার’ সিরিজের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব সহ ‘সেরপিকো’ ছবির জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া এই অভিনেতা ১৯৯২ সালে ‘সেন্ট অব ওম্যান’ ছবির জন্য অস্কার পেয়েছিলেন। অথচ তার ভক্তদের মতে, অভিনেতা আল পাচিনো ‘গডফাদার’ সিরিজের জন্য অস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই