ভূমিকম্পের আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র বসানো হবে : দুর্যোগসচিব

ভৌগোলিক অবস্থানের সুবাদে ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ। কিন্তু এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনোই বড় মাত্রায় আঘাত হানবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ভূমিকম্প মোকাবিলায় আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র বসানো এবং জাতীয় উদ্ধার কেন্দ্র নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা চলছে।

বুধবার এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল। ভূমিকম্প মোকাবিলায় জাপানের অভিজ্ঞতা জানতে সম্প্রতি ওই দেশ সফর করেন তিনি। খবর: ঢাকাটাইমস

৪ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুর্যোগসচিবের নেতৃত্বে জাপান সফর করে।

প্রতিনিধিদলটি যখন জাপান সফরে ছিল, ভূমিকম্পপ্রবণ দেশটির দুটি দ্বীপনগরে তখন দুই দফা বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে। তাতে অর্ধশতের মতো প্রাণহানিসহ বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রতিনিধিদলটি সেখানে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা সরাসরি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পায়।

শাহ কামাল বলেন, “জাপানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি এবং ভূমিকম্প শেষ হওয়ার যে চিত্র, তা সরেজমিনে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের। সেখানে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার ১ থেকে ২ মিনিট আগে পূর্বাভাস জানানো হয় মানুষকে।”

বাংলাদেশের জনগণ যাতে ভূমিকম্পের আগেই পূর্বাভাস জানতে পারে, তেমন যন্ত্রপাতি দিতে জাপানকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, “জাপান সরকার আমাদের তা দেবে বলে জানিয়েছে।”

মো. শাহ কামাল বলেন, “জাপানে আমরা দেখেছি ভূমিকম্প আঘাত হানার সংকেত পেলে জনগণ নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে দৌড়ে যায়। ন্যাশনাল কেন্দ্রে আসা শুরু করে অনেক মানুষ। নিজেরাই আলোচনা করে প্রস্তুতি নেয়। প্রতিটি এলাকায় রয়েছে কন্ট্রোল টাওয়ার।

“জনগণকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া কিংবা উদ্ধারের জন্য তাদের রয়েছে অনেক হেলকিপ্টার। একটি জেলায় ২১টির মতো।”

সচিব বলেন, “জাপানের মতো আমরাও একটা আর্থকোয়েক সেন্টার করতে যাচ্ছি। এ জন্য জাপানের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে এই কেন্দ্র কোথায় করা হবে তার স্থান এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়ে স্থান নির্ধারণ করা হবে।”

জাপানে ভূমিকম্পে ফায়ার সার্ভিসের কাজ তাদের কার্যক্রম ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতার বিষয়ে সচিব বলেন, “তাদের ফায়ার সার্ভিস খুব শক্তিশালী এবং যন্ত্রপাতিও অত্যাধুনিক। আমরাও বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসকে শক্তিশালী করতে চাই।”

ভূমিকম্পের সময় জাপানিদের আচরণ প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা থেকে সচিব বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভূমিকম্প-ভীতি বেশি। জাপানে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের উত্তেজনা বা আতঙ্ক দেখা যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে সামান্য ভূকম্পনেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।”

“অথচ বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা কম”, বলেন সচিব। “কেননা বাংলাদেশে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বা কেন্দ্রস্থল নেই। যেটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বলে দেখা যাচ্ছে, তা ঢাকা থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারে। সম্প্রতি যে ভূমিকম্পটি বাংলাদেশে হয়ে গেল, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ রিখটার স্কেল হলেও বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই।”

সচিব বলেন, “বড় বড় নদীতে ঢেউ উঠে তা কিনারে গিয়ে শেষ হয়। কিনারে যেটুকু ধাক্কা লাগে, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের গতির অবস্থা ঠিক তেমন। তাই ৭ দশমিক ৯ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে বেশি পরিমাণ মানবিক বিপর্যয় ঘটবে না। তবে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ভয়ের আশঙ্কা রয়েছে।”

ভূমিকম্প-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় শাহ কামাল বলেন, সরকার সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মানুষকে কীভাবে উদ্ধার করা যাবে এবং নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে কিংবা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সচিব বলেন, ভূমিকম্প সহনীয় বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশের কোথাও যাতে বিল্ডিং কোড না মেনে কোনো উঁচু ভবন নির্মিত হতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সচিব আরো বলেন, “ভূমিকম্পের বিপর্যয়ে উদ্ধার যন্ত্রপাতি আমাদের দেশে এখনো পর্যাপ্ত নয়। তবে ভূমিকম্প উদ্ধার যন্ত্রপাতি কেনার চিন্তা-ভাবনা চলছে।”



মন্তব্য চালু নেই