ভূমিকম্পে ঢাকা উদ্ধারে লাগবে ৫ হাজার বছর!

ঢাকা সিটিতে প্রায় ৭২ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বাইরেও রয়েছে হাজার হাজার ভবন। ঢাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে শুধু এই ৭২ হাজার ভবন যদি ধসে পড়ে, আর রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় যেভাবে উদ্ধারকাজ করা হয়েছে সেভাবে করলে উদ্ধার করতে প্রায় ৫ হাজার বছর লেগে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান এ এস এম মাকসুদ বলেন, ‘বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঢাকা সিটিকে উদ্ধারে কত বছর লাগবে তা নির্ভর করবে উদ্ধার ক্যাপাসিটির উপর। তবে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা উদ্ধারে ২৪ দিন লেগেছিল।’

তিনি বলেন, ‘কোনো দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে তা উদ্ধারের দায়িত্ব পড়ে জাতিসংঘের। তারাই উদ্ধার করে। সাধারণত ৩ মাসের মধ্যে এ কাজটি করতে হয়। আর এ কাজে পৃথিবীর সব জাতি ও সংস্থা এগিয়ে আসে।’

এই ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ জানান, ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ভবন রয়েছে। তখনই ৭২ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কথা বলা হয়েছিল। এখন আরও বেড়েছে। মধুপুরে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হলে এবং মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭.৬ হলে ঢাকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। অর্থাৎ উৎপত্তি স্থল যত কাছে হবে ক্ষতি ততো বেশি হবে।

১০০ বছর পর পর ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা ১০০ বছর পার করে এসেছি প্রায়। তাই ভূমিকম্প সহসাই হতে পারে। আমরা সে পর্যায়ে চলে এসেছি।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় মারা যায় ১ হাজার ১৩৬ জন। আহত হয় ২ হাজারের মতো। নিখোঁজ হয় অনেকে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৭। এতে ঢাকা, রাজশাহী ও লালমনিরহাটে ৩ জন মারা যান। এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে প্রায় ৫ হাজার বছর লেগে যাবে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত হয় ২৪ দিনে। এতে রাষ্ট্রের সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছিল। এরপর আর উদ্ধারের সক্ষমতা বাড়েনি। তাই বড় ভুমিকম্পে ঢাকার ধংসযজ্ঞে কত সময় লাগবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন কে কাকে সাহায্য করবে?

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ মো. কামাল বলেন, ‘সময় তো লাগবে। তবে কত সময় লাগবে তা আমার জানা নেই।’

ভূমিকম্প মোকাবিলায় স্থায়ী কোনো সমাধান নেই জানিয়ে সচিব বলেন, ভূমিকম্প হলে পরবর্তী উদ্ধারকাজের জন্য ঢাকা মহানগরীকে ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এখানে ৮টি টিম থাকবে। তারা উদ্ধারকাজ পরিচালনা, সড়ক পরিষ্কার, মৃতদেহ উদ্ধার ইত্যাদি কাজ করবে। এ ছাড়া দেশের প্রধান ৯টি শহরের ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্রও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শাহ্ মো. কামাল জানান, উদ্ধারকাজের জন্য কোস্টগার্ডকে ৪টি রেসকিউ বোট দেয়া হয়েছে এবং ১২ জেলায় ১২টি ছোট বোট দেয়া হয়েছে। আর ১০০ কোটি টাকার তাঁবু কেনা হচ্ছে, যা হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র তথা খোলা আকাশের নিচের মানুষকে আশ্রয় দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে।

এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আমলে সৌদি বাহশাহ ১২০০ তাঁবু দিয়েছিলেন। তা দিয়েই আমরা এতদিন চলে আসছি, এখনো চলছি।’

ভুমিকম্প পরবর্তী কাজের জন্য ঢাকায় ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরির প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ইতোমধ্যে ৩২ হাজার তৈরি করা হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার অতি দ্রুত করা হবে। ভূমিকম্পে করণীয় সম্পর্কে দ্রুতই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানান সচিব।

ঢাকায় কতটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নে শাহ্ মো. কামাল বলেন, ‘এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এর জবাব আমরা এখনো পাইনি।’

তিনি জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৫৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতিটি জেলায় জেলায় শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সকলকে নিয়ে সচেতনতামূলক মহড়া হবে। সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভাকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে তাদের প্রস্তুতি ও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোলরুম খোলা রাখা, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ এবং ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।-বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই