ভূমিকম্প ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের ৭০ ভাগ ভবন

ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ভবন।

৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ভবন ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রামে স্কুলভবনগুলো।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রাক্তন ভিসি জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি পরিচালিত এই গবেষণার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে স্কুলপড়ুয়া শিশু বা ছাত্রছাত্রীরা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রামের ৭০ শতাংশ ভবন ধূলিস্মাৎ হয়ে যেতে পারে।

চুয়েট ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূস্তরের পাটাতনে ফাটলের কারণে ইউরোশিয়ান ও ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের ভূমিকম্পের জোনের মধ্যেই রয়েছে চট্টগ্রাম। এ প্লেট দুটি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে সম্প্রতি ঘন ঘন হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে।

চট্টগ্রামের সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ভূমিক¤প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম আলী আশরাফ বলেন, ভূমিকম্পে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার বেল্ট বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ভূ-পাটাতনের (টেকটোনিক প্লেট) একটি ফাটল বা ফল্ট লাইন চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল হয়ে আন্দামান পর্যন্ত চলে গেছে। অনেকগুলো ভূ-ফাটল লাইন, ভূমিকম্পের উৎসস্থল (ইপি সেন্টার) চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে কাছাকাছি অবস্থানে সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে ছোট ছোট ভূমিকম্প শক্তিশালী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে ধারণা করা হয়। যদিও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে দিনক্ষণ-সময় সুনির্দিষ্ট করে পূর্বাভাস দেওয়া সাধ্যের বাইরে। তবে ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগত কিছু আলামত ভূমিকম্পের আলামত বহন করে। যা থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

চুয়েট গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চুয়েটের সদ্যবিদায়ী ভিসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছভাবে, গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ উপায়ে যেনতেন প্রকারে নির্মিত বাড়িঘর কিংবা ভবনের হার শতকরা ৭৮ ভাগ।

ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নকশা লঙ্ঘন করে অপরিকল্পিত, ত্রুটিপূর্ণভাবে এসব বাড়িঘর ও ভবন নির্মিত হয়েছে। যা মাঝারি-শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে অধিকাংশ ভবন টিকবে না।

কম্প্রেহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপির) জরিপ মতে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ১ লাখ ৮০ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যিক ভবন ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ। রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮ মাত্রার মধ্যে ভূমিক¤প সংঘটিত হলে সেসব ভবন কম-বেশি বিধ্বস্ত হতে পারে।

চুয়েটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত ও ত্রুটিপূর্ণ নগরায়ণে এ অঞ্চলে মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে অধিকাংশ ভবনই টিকবে না। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূ-স্তরে চারটি বিপজ্জনক ফাটল লাইন প্রবল ভূমিকম্পের দিকনির্দেশ করে।

এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সীতাকুণ্ড এলাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নগরীর খুলশী, মোহরা, মদুনাঘাট এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট (ডিসিসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে বলা হয়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড টেকনাফ ফল্ট বা ভূফাটল লাইন এবং রাঙ্গামাটির বরকল ফল্ট ও মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ ভূ-ফাটল লাইন থেকে যে কোেনা সময় ৬ বা এর ঊর্ধ্বমাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে ফল্ট জোনের (ভূ-তাত্ত্বিকচ্যুতি) যে অবস্থা তাতে এই অঞ্চলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছোট আকারের ঘন ঘন ভূ-কম্পনও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। আর যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে চট্টগ্রাম ধ্বংস্তুপে পরিণত হবে। এখানকার দুই লাখ ভবনের তিন-চতুর্থাংশই ভেঙে পড়বে। সর্বশেষ ভূমিকম্পে নয়টি ভবন হেলে পড়ার পর এ আশঙ্কা আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। তাই ঝুঁকি মোকাবেলায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।



মন্তব্য চালু নেই