ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালে শীতের ভয়াবহতা

চলতি বছরের এপ্রিলে নেপালে ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পরে হাজার হাজার নেপালি এখন তাবুতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে । বড় মাত্রার ওই ভূমিকম্পের পর মাসের পর মাস পার হয়ে গেলেও নেপালিরা এখনো নানা সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মত তাদের নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে তীব্র শীতের ভয়াবহতা। ভুমিকম্পের ভয়াবহতার চেয়ে তীব্র শীতই এখন তাদের দুর্ভোগের প্রধান কারণ। এ দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে জ্বালানি সঙ্কট। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে জ্বালানি সমস্য। নেপালে সরকার ভূমিকম্প পরবর্তী পুনর্গঠন তহবিলের জন্য ৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করলেও রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার কারনে তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়নি।

নেপালে সাত দশমিক আট মাত্রার ওই ভূমিকম্পে প্রায় আট হাজার মানুষ মারা যায় এবং প্রায় কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর হারায়। আর ঘরবাড়ি হারানো হাজার হাজার মানুষ বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয় নিয়েছে হিমালয়ের পাদদেশে। তাদের কারো কাছেই নেই পর্যাপ্ত শীতের কাপড়, বিছানাপত্র এবং নিরাপদ আশ্রয়। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রে ছিল পশ্চিম নেপালের প্রত্যন্ত গ্রাম ফিলিমের। সেখানে স্কুলের ছাত্রাবাসগুলোর প্রায় সবই ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ফলে সেখানকার দুই’শ ছাত্র বাধ্য হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে।

ক্ষীন অবকাঠামো এবং হাড় কাঁপা বাতাসের কারণে গ্রামের তাপমাত্রা নেমে এসেছে দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসে। আর এই তাপমাত্রা আরও এক দফা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বারো বছরের দাওয়া ফুনচক লামা নামের এক কিশোর সংবাদমাধ্যম এএফপি কে জানায় ‘ রাতে এখানে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে। তখন আমার মনে হয় যদি আমাদের কাছে একটি মোটা কম্বল থাকতো ’। ফিলিম থেকে আসা শিশুদের অনেকেই এখানে তাঁবুতে বাস করে। তারা তাঁবুতে থাকে কারণ তাদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার পথগুলো ভূমিকম্পের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।

একজন স্কুল অধ্যক্ষ মুক্তি আচারি বলেন ‘আমাদের কাছে সীমিত খাদ্য মজুদ আছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নেই কোন শাকসব্জি, যথেষ্ট ডাল। রান্নার জন্য তেল আছে মাত্র দশ দিনের। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা আমি চিন্তিত শীত নিয়ে এবং আমার বাচ্চাদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে’। তিনি আরো বলেন ‘তাদের জন্য বাড়িতে ফিরে যাওয়া সত্যিই খুবই কষ্টকর। তাই তাদেরকে আমরা এখানে তাঁবুতে রেখেছি। কিন্তু আমি চিন্তিত তীব্র শীতে জমে তাদের মৃত্যু যেন না হয়। কারণ তাদের কাছে নেই পর্যাপ্ত শীতের কাপড় এবং বিছানাপত্র ’।

এদিকে জাতীয় পুনর্গঠন প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে হাজারো আশ্রয়হীনদের জন্য ঘরবাড়ি পুনঃনির্মানে। স্বেচ্ছাসেবীরা তুষারপাতের আগেই জরুরি জিনিসপত্র সরবরাহের কাজ শুরু করেছিল কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। এদিকে নেপালের কয়েক’শ জ্বালানি বোঝাই ট্রাক ভারত-নেপাল সীমান্তে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে যেখানে ভারতই হচ্ছে নেপালের প্রধান সরবরাহকারি। প্রায় দশ সপ্তাহ ধরে সংবিধানের সংশোধন নিয়ে জটিলতার জের ধরে জাতিগত সংখ্যালঘুরা সীমান্ত অবরোধ করে রেখেছে। আর নেপালে তীব্র শীতের এই ভয়াবহতা রাজনৈতিক অস্থিরতার চেয়েও জটিল আকার ধারণ করেছে।



মন্তব্য চালু নেই