ভোলায় ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা মেঘনা পারের মানুষ

ভোলা ইলিশা পয়েন্টের দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক দোকানপাট ও বসতঘর।

এছাড়া ১৫ দিনের তীব্র ভাঙনে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়িসহ অন্তত ৬০ একর জমি মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ। এর মধ্যে এক সপ্তাহে দু’টি গুচ্ছ গ্রাম, একটি ইসলামী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সাতটি মাছের ঘের ও স্থাপনা।

ভাঙনের মুখে পড়েছে তিনটি বাজার, একটি পুলিশ ফাঁড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দু’টি কমিউনিটি ক্লিনিক, দু’টি মৎস্য আড়ৎ ও একটি লঞ্চঘাট। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও টিউব ডাম্পিং করলেও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না ভাঙন। শুক্রবার(৪সেপ্টম্বর) থেকে নতুন করে ৬৭০ মিটার এলাকায় ৪৫৪ পিস জিও টিউব স্থাপনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক জিও টিউবে ভাঙন রোধ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিন দেখা গেছে, ইলিশা ইউনিয়নের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকা থেকে মুরাদ শফিউল্ল্যা পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪শ’ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। ফেরিঘাট এলাকার ৪০টি দোকান ও নদীর তীরবর্তী আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় দোকানপাট ও বসতঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন মানুষজন। তবে এর পর এই মানুষগুলো কোথায় আশ্রয় নিবেন সে চিন্তায় দিশেহারা।

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলাকে রক্ষা করতে হলে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু পাউবো যে হারে কাজ করছে তাতে ভাঙন রোধ সম্ভব নয়, বেশি বেশি জিও টিউব ফেলে দ্রুত ভাঙন রোধ করা প্রয়োজন।তিনি বলেন, গত ১৫ দিনের তীব্র ভাঙনে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়িসহ অন্তত ৬০ একর জমি মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, নদী থেকে এখন ইলিশা জংশন বাজারের দুরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। ভাঙন রোধ না হলে বাজারের দুই হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিলীন হয়ে যাবে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

ইলিশা ইসলামিয়া মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন বলেন, মেঘনায় ভয়াবহ ভাঙন চলছে, কিন্তু কাজ করছে ধীর গতিতে। শুষ্ক মৌসুমে যদি ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো তাহলে বর্ষায় এভাবে ভাঙন হতো না। ভোলার ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ ইউনিয়ন ইলিশাকে বাঁচাতে ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

এদিকে, মেঘনায় ভাঙনের ফলে ঘাট ভেঙে যাওয়ার ফলে বন্ধ রয়েছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ফেরি সার্ভিস। এতে জেলার সঙ্গে ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছন্ন রয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, মেঘনা যেভাবে ভাঙছে তাতে নকশা অনুযায়ী অনেক বেশি জিও টিউব দিয়ে ভাঙন রোধ করতে হবে। অল্প জিও টিউব দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।

ভাঙন কবলিত এলাকার হাসনা বলেন, সহায় সম্বল বলতে একটি মাত্র ঘর ছিলো, সেটাও মেঘনায় ভাঙনের মুখে পড়েছে, এখন কোথায় আশ্রয় নিবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। ভাঙন কবলিত বিপু, মিনারা, মমতাজ ও সাহিদা জানায়, মেঘনায় তাদের ঘর তিনবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঁধের উপর, কিন্তু তাও ভাঙনের মুখে পড়েছে।

এখন কোথায় গিয়ে নতুন ঠিকানা গড়বেন সে চিন্তায় দিশেহারা। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম জানান, মেঘনায় তীব্র ভাঙনের মুখেও আমরা তা ঠেকানোর চেষ্টা করছি। পুরাতন ফেরিঘাট থেকে নতুন ফেরিঘাট পর্যন্ত ৬৯০ মিটার এলাকাকে চিহ্নিত করে প্রাথমিকভাবে ৪৫৪ পিস জিও টিউব ডাম্পিং করা হচ্ছে।

এতে ভাঙন রোধ না হলে আরো বেশি জিও টিউব ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এছাড়া অন্য পয়েন্টগুলোতে এই মুহূর্তে কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ হলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই