ভোলায় মা ইলিশ রক্ষায় প্রকৃত জেলেদের জন্য ত্রাণ বরাদ্দের দাবি

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদের দিন থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিনের জন্য ভোলার উপকূলীয় অঞ্চলে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ (মা ইলিশ) মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ওই সময় যে সব জেলেরা বেকার জীবনযাপন করবেন তাদের জন্য ত্রাণ বরাদ্ধের দাবি জানিয়েছেনে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা। প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদ-নদীতে সব ধরনের মাছ ধরার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকে মৎস্য বিভাগ।

এ কারণে অবশ্য সরকার জেলেদের জন্য ভিজিএফের চাল বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। যদিও প্রকৃত জেলেরা সরকারের বরাদ্দকৃত ওই চাল পান না বলে হাজারো অভিযোগ রয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে এসব চাল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ এলাকার কিছু টাউট-বাটপাররা ভাগ-বাটোয়ারা করে খেয়ে থাকে। আর মৎস্য অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়ে থাকে।

এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের জেলে সমিতির নেতারাও এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলা জেলায় লক্ষাধিক জেলে নদ-নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।

এসব জেলেদের মধ্যে অধিকাংশ জেলেই সরকারের বরাদ্ধকৃত ভিজিএফের কোন চাল পান না। অনেক জেলে সরকারের ওই ভিজিএফের চাল বরাদ্ধের কথাও জানেনও না। অনেক জেলে আবার জেলেদের জন্য বরাদ্ধকৃত ভিজিএফের চালের খবর জানলেও তাদের কিছুই করার থাকে না। সব জেলের তালিকাও মৎস্য অফিসে নেই। জেলা মৎস্য অফিস ও জেলে সমিতির নেতাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ভোলা জেলায় জেলে রয়েছে ৮৫ হাজার ৬২০ জন।

এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় রয়েছে ১৫ হাজার জেলে। এর মধ্যে ৫২ হাজার তালিকাভূক্ত জেলের নামে সরকারের চাল বরাদ্ধ আসে। তবে ওই সব জেলের মধ্যেও অনেক জেলে বরাদ্ধকৃত ভিজিএফের চাল পান না।এ বিষয়ে সরজমিনে ভোলা সদর উপজেলার মেঘনার পারে বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় উত্তর ইলিশা ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে জয়নাল আবেদীন (৫৫) বলেন, আমি বছরে ১২ মাস নদীতে মাছ শিকার করছি। প্রায় ১৯ বছর ধরে মাছ ধরছি।

তিনি আরো বলেন, মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধনসহ সরকারের বিভিন্ন অভিযান এলেই আমরা মাছ শিকার বন্ধ করে দেই। শুনেছি জাটকা নিধন অভিযানে জেলেদের জন্য সরকার প্রতি বছর চাউল বরাদ্ধ দেয়। কিন্তু আমরা কোন বরাদ্ধ পাই না। গত বছরও কোন চাউল পাইনি। গত ১৯ বছরে এ পর্যন্ত সরকারের বরাদ্ধকৃত কোন চাউল পাইনি।

অথচ প্রতি বছরই জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্ধ আসে। তিনি ভিজিএফ চাল বরাদ্ধের পাশাপাশি মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের জন্য সরকারি বরাদ্ধেরও দাবি জানান। রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের জেলে মো. জসিম (২৫) বলেন, আমরা সরকারের এক ছটাক চাউলও পাইনি। সরকারের বরাদ্ধকৃত সব চাউল মাথাওয়ালারাই খাইয়া হালায়।

একই গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে মিলন (৩৫) ও ইউছুফ আলী সরদার (৩৮) বলেন, আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরছি। কিন্তু সরকারের বরাদ্ধকৃত ভিজিএফ কোন চাউল কিংবা ত্রান পাইনি। তারা আরো বলেন, সব চাউল এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার, ক্ষতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও এলাকার টাউট-বাটপাররা খাইয়া হালায়। তারা আগামীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের জন্য সরকারি বরাদ্দের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে জেলা ক্ষুদ্র জেলে মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ জানান, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিনের জন্য নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকে। নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত আট মাস নদীতে বিভিন্ন অভিযান চলে। আর সরকার মাত্র চার মাসের ভিজিএফ চাল বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার কেউ পান কেউ পান না। প্রত্যেক জেলের জন্য ভিজিএফ এর ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক জেলেকে ৪০ কেজির স্থলে ২০ কেজি ও ২৫ কেজি করে দেওয়া হয়।

তাছাড়া এক মাসের চাল আরেক মাসে দেওয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময়েও জেলেরা বেকার জীবনযাপন করে থাকেন। তাই আগামীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের জন্য সরকারি বরাদ্ধের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মল্লিক বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের জন্য সরকারি কোন বরাদ্ধের চিঠি পাইনি। এ খাতে জেলেদের জন্য বরাদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।



মন্তব্য চালু নেই