ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে যে খাতগুলো

২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু খাতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

যেসব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সে সব খাত হলো-

পশু খাদ্যের পুষ্টি প্রিমিক্স : প্রাণিসম্পদ রক্ষা এবং প্রাণিসম্পদের বৃদ্ধি দেশের জন্য অপরিহার্য। প্রাণিসম্পদ খাতের বিদ্যমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে ‘পশু খাদ্যের পুষ্টি প্রিমিক্স’ এর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষিপণ্যের হিমাগারের বিদ্যুৎ বিল : কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও সরবরাহ মূল্য লাঘবের লক্ষ্যে হিমাগার সেবার বিদ্যুৎ বিলের ওপর বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

হেপাটাইসিস-সি ভাইরাসজনিত রোগের ঔষধ : হেপাটাইসিস-সি ভাইরাসজনিত জটিল রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দেশের জনগণের এ চিকিৎসা ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে লিভার সংক্রান্ত জটিল রোগের ঔষধের ওপর উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্জ্যপণ্য রি-সাইক্লিং : বিপুল সংখ্যক দরিদ্র জনগণ ভাঙ্গা লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী এ সকল বর্জ্যপণ্য রি-সাইক্লিং করা হয়। এ বিবেচনায় ভাঙ্গা লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ পণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

পলিস্টার সুতার কাঁচামাল : পলিস্টার সুতার কাঁচামাল পেটচিপস এর আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার শুন্য হলেও এ পণ্যের ওপর চার শতাংশ হারে অগ্রীম ভ্যাট প্রযোজ্য। দেশীয় শিল্পের রক্ষার স্বার্থে এ ভ্যাট মওকুফের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এতিমখানার বরাদ্দ : দুঃস্থ ও এতিম সন্তানদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি এতিমখানায় বরাদ্দকৃত অর্থ মূসকের আওতামুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্মাণ শিল্প রুগ্ন : আধুনিক সভ্যতার দ্রুত অগ্রসর যাত্রায় ফটো নির্মাণ শিল্প রুগ্ন-প্রায়। ফটো নির্মাতা খাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই খাতের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

আয়রণ অক্সাইড : আয়রণ অক্সাইড দীর্ঘদিন যাবৎ দেশে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমদানি বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই শিল্প দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে অবদান রাখছে বিধায় আয়রণ অক্সাইড এর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

গ্লাসটিউব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব : আমদানি বিকল্প শিল্প হিসেবে গ্লাসটিউব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব ও এর উপকরণের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ের মূসক অব্যাহতি এ বছরের ৩০ জুন শেষ হবে। এ শিল্পে প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে উক্ত মূসক অব্যাহতির মেয়াদ ২০১৭ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

হাই-টেক পার্কের সেবা : হাই-টেক পার্ক বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে। এ কারণে হাই-টেক পার্কের ডেভেলপারদের বিদ্যুৎ বিল এবং ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীদের যোগানদার সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

রিসাইক্লিং প্লাস্টিক দানা : প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবকারী একটি উপাদান। অন্যদিকে শিল্পের প্রয়োজনে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার অস্বীকার করার উপায় নেই। প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিং করে প্লাস্টিক দানা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একটি নির্মল সবুজ পরিবেশ বিনির্মাণে নীতিগত প্রণোদনা প্রদানের অংশ হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে প্লাস্টিক দানা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

সৌর-বিদ্যুতের ব্যাটারি : পরিবেশ সুরক্ষাকারী সৌর-বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের মহৎ উদ্যোগকে নীতিগত সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে IDCOL নিবন্ধিত সোলার প্যানেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নিকট ৬০ অ্যাম্পিয়ার পর্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারী সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাটারী উৎপাদনকারীদের ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

পাট শিল্প : বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পাট শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে কাঁচা পাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে যোগানদার সেবার বিপরীতে ৪ শতাংশ মূসক গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে মওকুফ করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একটি সবুজ শ্যামল পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে পাটজাত পণ্যের স্থানীয় বিক্রয়ের ওপর বিদ্যমান ব্যবসায়ী পর্যায়ের মূসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়। একইসঙ্গে পাট ও পাটজাত পণ্যের লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন ফি এর ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঔষধ শিল্প : ঔষধ শিল্প আমাদের অন্যতম গর্বের একটি খাত। এ শিল্প দিনে দিনে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এই খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রশংসনীয়। ঔষধ রপ্তানির লক্ষ্যে নমুনা ঔষধ রপ্তানির মূসক অব্যাহতির বাৎসরিক সীমা বর্তমানের ৩০ হাজার টাকা হতে বৃদ্ধি করে বাৎসরিক এক লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই