ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে শিক্ষা এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত ব্যবসা

গত কিছুদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ১০% ভ্যাট আরোপের কথা শুনে আসছিলাম। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন ও চাপে তা ৭.৬% এ গিয়ে ঠেকেছে। যবে থেকে বুঝের হয়েছি তবে থেকে শুনে আসছি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। একটি জাতির উন্নতির প্রধান এবং প্রথম শর্ত হচ্ছে শিক্ষা। তা ছাড়াও শিক্ষা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। যা দেয়া রাষ্ট্রের জন্য কর্তব্য। সেই কর্তব্য থেকে রাষ্ট্র ব্যার্থ অনেকাংশেই। রাষ্ট্র সবার শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে ভুড়ি ভুড়ি। ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় এ যেন মুদির দোকানে পরিনত হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ পেলেই এই ফি ওই ফির কথা বলে মাসে মসে টাকার হিসেবটা বাড়িয়ে দেয়। যে বিজ্ঞাপন দেখে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় সে বিজ্ঞাপনের আর ঠিক ঠিকানা থাকে না। হিসেব খালি বাড়তেই থাকে বাড়তেই থাকে। তার উপর সরকার এবার ৭.৬% ভ্যাট নির্ধারণ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর। তাহলে এখন বিষয়টা কি দাড়ালো? শিক্ষা ক্ষেত্র যে দিন দিন ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে তা আগে রাষ্ট্র স্বীকৃত ছিলনা। এ ভ্যাট আরোপের মধ্য দিয়ে তা এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত।
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধনীর সন্তানরাই পড়েন। কিন্তু বর্তমানে তা এ পরিস্থিতিতে নেই। একসময় ধনীর সন্তানরাই পড়তেন। এখন মধ্যবিত্ত পরিবার এবং একেবারে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। অনেক পরিবার আধবেলা খেয়ে সন্তানকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। কারণ একটাই সময় কম লাগে এবং যথাসময়ে ডিগ্রী অর্জন করা যায়। কিন্তু এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সরকারের উচিত হয়নি ৭.৬% ভ্যাট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপ করা। এমনিতেই ভুড়ি ভুড়ি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে। কিন্তু রাষ্ট্র কর্তৃক এরকম অবিচার শিক্ষার্থীদের মনকে দারুণভাবে ব্যথিত করেছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন সেশানজট আর রাজনৈতিক কলহে জর্জরিত তখন শান্তি প্রিয় শিক্ষার্থীদের ভরসার স্থল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু এখানেও শান্তিতে নেই শিক্ষার্থীরা। এখানে পড়ালেখার চেয়ে বেশি চিন্তিত থাকতে হয় কোন সময় কোন ফি পরিশোধ করতে হবে তা নিয়ে। শিক্ষার্থীদেরকে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। রাষ্ট্রের প্রতি আবেদন শিক্ষার্থীদেরকে করের আওতার বাইরে রাখুন। শিক্ষার্থীরা ডিগ্রী ক্রেতা নয় এরা দেশের সম্পদ। এই সোনারবাংলাকে যারা একদিন নেতৃত্ব দেবে সেই শিক্ষার্থীদেরকে ডিগ্রী ক্রেতা বানানো রাষ্ট্রের কাজ নয়।

এস.এম. হৃদয় রহমান
বিএ (অনার্স) ১ম বর্ষ,
ইতিহাস বিভাগ
ঢাকা কলেজ।



মন্তব্য চালু নেই