মক্কার মুয়াজ্জিন আবু মাহজুরা

আবু মাহজুরা অল্প বয়সী গোফ না উঠা এক ছোট বালক। খুবই সুন্দর কণ্ঠ তার। মক্কা অধিবাসী ছিলেন। ঘটনাটি বিশ্বনবীর মক্কা বিজয়ের পরের। আবু মাহজুরা তখনও ইসলামের মহামূল্যবান নিয়ামাত থেকে বঞ্চিত। মক্কার অন্যান্য বালকদের মতো সেও বকরি চড়াত। একদা সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মক্কার এক উপতক্যায় বকরি চড়াতে গিয়েছিল।

এমন সময় বিশ্বনবী কোনো এক যুদ্ধে যাওয়ার সময় ঐ উপতক্যায় পৌছলে জোহরের নামাজের সময় হয়ে যায়। সেখানে তাবু ফেলা হয়। হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু উচ্চ স্বরে আজান দিতে লাগলেন। ঐ উপতক্যায় বকরি চড়ানো বালক আবু মাহজুরাও আজানের শব্দ শুনলো এবং সে মনোযোগ সহকারে আজানের পুনরাবৃত্তি করতে লাগলো। যে আজানের সুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয়কে আকৃষ্ট করে তোলে। যদিও আবু মাহজুরা ঠাট্টা করে আজানের পুনরাবৃত্তি করছিল।

আজান শেষ হতেই বিশ্বনবী হজরত আলী ও যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে নির্দেশ দিলেন, কে আজান দিয়েছে। সে আজানদাতাকে নিয়ে আস। তাঁরা পাহাড়ের পিছন দিকে গিয়ে আজান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপকারী বালকদেরকে রাসুলুল্লাহর নিকট নিয়ে আসেন।

রাসুলুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন- তোমাদের মধ্যে কে এই মাত্র আজান দিল?

তখন তারা খুব লজ্জাবোধ করে একে অপরের দিকে তাকালো। কারণ সে তো ঠাট্টার স্বরে আজান দিয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ তখন একজন একজন করে আজান শুনতে লাগলেন এবং সর্বশেষ আবু মাহজুরা আজান দিলে তার আজান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনপুত হলো।

রাসুলুল্লাহ বললেন- তুমি এই মাত্র আজান দিয়েছিলে?

আবু মাহজুরা বলল- হ্যাঁ।

তখন তিনি তাঁর বরকতময় হাত দ্বারা আবু মাহজুরার পাগরি খুলে তার মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন।

‘আল্লাহুম্মা বারিক ফিহি, ওয়াহদিহি ইলাল ইসলাম। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তাকে বরকত দাও এবং তাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফিক দাও।’

আবু মাহজুরার ভাগ্য খুলে গেল, রাসুলুল্লাহর বকতময় হাতের স্পর্শ পেয়ে বলে উঠলো-

আশহাদু আললা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্নাকা রাসুলুল্লাহ। অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতিত সত্য মাবুদ নেই, আর নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসুল।

বিশ্বনবী আবু মাহজুরাকে সুসংবাদ জানিয়ে তার চাকরি দিয়ে দিলেন, এবং বললেন, ‘যাও তোমাকে মক্কাবাসীর মুয়াজ্জিন নির্ধারণ করা হলো। এখন থেকে তুমি মক্কাবাসীর মুয়াজ্জিন।

আবু মাহজুরা বলল, আমি আমার চুলগুলো আর কাটবো না, যার উপর আল্লাহর রাসুল তাঁর প্রিয় হাত রেখেছিলেন।

পরবর্তীতে মক্কা মুকাররমায় কম-বেশি ৩০০ বছর যাবত তার বংশধররা আজান দিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই