মধ্যবিত্ত কিশোরীদের যৌন দাসত্বের ভয়ঙ্কর কাহিনী!

‘B here in 10. Friends here.’ মোবাইলে এই মেসেজ ভেসে উঠতেই ১৩ বছরের লারার বুঝতে কোনও অসুবিধাই হল না যে, এটিই তার জন্য পরবর্তী আদেশ। মেসেজের প্রেরক জেনেবুঝেই এইরকম বার্তাটি দিয়েছেন, যাতে তার বিরুদ্ধে কোনওরকম ‘ক্লু’ না থেকে যায়। কিন্তু লারা জানত, তাকে কী করতে হবে এবং এটাও জানত এসবের হাত থেকে কোনও নিস্তার নেই।

এক কিশোরী থেকে যৌন দাসে পরিণত হওয়ার সত্য কাহিনী বর্ণিত হয়েছে লারা ম্যাকডোনেলের ‘গার্ল ফর সেল’ বইটিতে। বইটি অবশ্যই বিদেশগামী ও শহুরে নারীদের অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিত। এসব ফাঁদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার।

মধ্যবিত্ত পরিবারের আরামপ্রদ জীবনযাত্রাকে পেছনে ফেলে আসলেও, লারা জানত তার মায়ের ভালবাসা, মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক, তার প্রিয় পোষ্য স্নোই, অক্সফোর্ডের অ্যাশমোনিয়া মিউজিয়াম বা লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে কাটানো এই সব সময়গুলো ধীরে ধীরে তার জীবন থেকে ফুরিয়ে আসছে।

মানুষের পক্ষে বসবাস অযোগ্য এক স্থানে দীর্ঘদিন যাবৎ তাকে যৌন নিগ্রহ ও হেনস্থা করা হয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেই জঘন্য আবাসটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিক্রান্ত করার জন্য রোজই কোনও না কোনও অজুহাত খুঁজতে হত লারাকে।

মাদক, পুরুষদের গ্যাং এবং সর্বোপরি তাকে এই অদ্ভুত জীবন প্রদানকারী মহম্মদের কথা তার মাকে জানাতে অপারগ ছিল সে। সে ছিল মহম্মদের হাতের পুতুল। পুরনো প্রাচীর ঘেরা অক্সফোর্ডের এক যৌন হেনস্থাকারী দলের মধ্যে পড়ে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিল লারা। দিনের পর দিন লারার ওপর এই ঘৃণ্য অত্যাচার এবং যৌন হেনস্থার এই নগ্ন সত্যটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। কিন্তু লারা হয়ত মনের গভীরে জানত তার এই পরিণতির প্রকৃত সত্য।

দত্তক নেওয়ার পূর্বে লারার জীবন ছিল নারকীয়। তার জন্মদাত্রী মা ছিল বিকৃত মানসিকতার। মাদকাসক্ত ছিলেন তিনি এবং লারা ও তার ওপর ৬ ভাই বোনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন। যদিও বাবা, একটু হলেও ছিলেন স্বাভাবিক। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে তার আলাপ হয় মহম্মদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে টেলিফোন নম্বর অদল-বদল হয় এবং সুপুরুষ এই ছেলেটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে লারা। তার পরেই সম্পূর্ণভাবে গতিপথ পাল্টে ফেলে তার কৈশোর জীবনটি।

ছেলেটির বারংবার অনুরোধে রাজি হয়ে লারা মহম্মদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অজান্তেই ঢুকে পড়ে যৌন হেনস্থাকারী এই গ্যাংয়ের ডেরায়। বাক্যালাপের সময় মহম্মদকে কখনই লারা কিছু লুকায়নি। তাই লারার অতীত জীবনের সত্যতা জানার পর সে তার দুঃখে গভীর সহমর্মী হয়ে অশ্রুপাত করতেও বাকি রাখেনি। এমনকি কখনও লারার প্রকৃত বয়স জানতে চায়নি সে। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল ভিন্ন, ক্রমশ লারাকে সে ভিঁড়িয়ে দিয়েছে অন্ধকার এক জগতে।

যৌন হেনস্থাকারী এই দলের নগ্ন রূপের সাক্ষী ছিল লারা। ভালবাসার বন্ধনে বেঁধে শেষ পর্যন্ত ১৩ বছরের এই কিশোরীকে বহুমুখী-গামী শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে মহম্মদ ও তার গ্যাং। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে সে রাজিই ছিল। কিন্তু এর পরেই বেরিয়ে আসে প্রিয় সঙ্গীর আস্তিনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সাপ। মহম্মদের প্রকৃত মানসিকতার কথা জানতে পারে লারা। ১০০ ইউরোর মাদকের টাকা শোধ করার বদলে একদল যুবকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আদেশ দেয় মহম্মদ।

পালানোর কোনও পথ খুঁজে পায় না লারা। স্তম্ভিত কিশোরী বাড়িতে এসে মায়ের কোলে আশ্রয় খোঁজে, বুকের ভেতরে চাপা কষ্ট নিয়ে মায়ের হাত থেকে রাতের খাবার খেতে চায়। সে জানত যে, সীমারেখা লঙ্ঘন করে ফেলেছে। আবার নতুন করে ছেলেবেলায় ফিরে যেতে চাইছিল লারা, উপভোগ করতে চেয়েছিল ছেলেবেলার দিনগুলোকে। কিন্তু ততদিনে জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছিল। এখন সে মহম্মদ নামক যুবকের যৌন ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে।

মাকে সব কথা জানানো, পুলিসকে খবর দেওয়া বা এসবের থেকে বহু দূরে পালিয়ে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারেনি সে। লারা সহযোগিতা না করায় তার মায়ের শত প্রচেষ্টাতেও পুলিশ তার অদ্ভুত আচরণের নির্দিষ্ট কারণ বের করতে পারেনি। মহম্মদের হুমকির ভয় লারাকে মৌনতা অবলম্বনে বাধ্য করে।

তবুও একবার মহম্মদের হুমকি উপেক্ষা করার সাহস দেখিয়েছিল সে। কিন্তু পর মুহূর্তেই বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া টেলিফোন শিহরন জাগিয়ে দেয় তার মধ্যে। ইউটিউবে যৌনকর্মী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার ছবি আপলোড করা হয়। তারপর মহম্মদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া তার কাছে আর কোনও পন্থা ছিল না৷‌ লারা জানত, এই ভিডিওটি ছিল কেবলমাত্র সতর্কীকরণ। আরও ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করে আছে তার জন্য।

মাত্র ১৩ বছরে বর্বরোচিত কিছু বিকৃত মানসিকতা এবং ভুলভাল প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা দিয়ে লারা পরিণত হয়েছিল যৌন ক্রীতদাসে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে এমনকি ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যেও এই ব্যবসা এখন রমরমা। অসংখ্য পর্ন সাইট গজিয়েছে এই রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। কিশোরী মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং গ্যাংসমেত সেক্সে তাদের বাধ্য করা। তাও আবার সেই যৌনাচরণ হবে দমনমূলক।

লারা তার জীবুকাহিনী তুলে ধরেছেন, যাতে ছোট্ট মেয়েগুলো তার মতো দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগে আসল সময়টা নষ্ট করে না ফেলে। প্রেমে পড়াটা তার ভুল ছিল না। কিন্তু প্রথম দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারকে জানানোটা ছিল তার কর্তব্য। এই প্রথম দিকের দুই তিন সপ্তাহের মধ্যেই সঠিক সিদ্ধান্তটি না নিতে পারলে বড় বিপদের আশঙ্কা। সারা জীবন বন্দি থাকার আশঙ্কা। তাই লারা তাগিদ দিয়েছেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে। জীবনের সুকিছুই ছেলেবেলার বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করতে।

আরো জানতে চাইলে দেখুন, ডেইলি মেইলের এই প্রবন্ধটি। এ লেখাটির জন্য সর্বাংশে অনুসরণ করা হয়েছে কলকাতার আজকাল পত্রিকার রূপসা ঘোষালের ‘মধ্যবিত্ত কিশোরীর যৌন দাসত্ব বৃত্তি!’ শিরোনামের কলামটি। পাঠককে অনুরোধ, বইটি সম্পর্কে নারীসহ সকলকে জানান।



মন্তব্য চালু নেই