মনের মানুষের খোঁজ সামাজিক মাধ্যমে?

মনের মানুষের খোঁজে বিচিত্র সব মাধ্যম বেছে নেবার কথা শোনা যায়।

রূপকথায় অদেখা, অচেনা আর অজানা কারো সঙ্গে হঠাৎ দর্শনেই যেমন প্রেম হয়ে যেত, তেমনি একসময় পত্রমিতালি কিংবা টেলিফোনে রং নাম্বারে ফোন করে হঠাৎ যোগাযোগ তৈরি হয়ে, পরে তা প্রেমে রূপান্তরের অনেক গল্পের কথা জানা যায়।

কিন্তু হালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে অনেকে নিজের মনের মানুষ খুঁজতে ব্যবহার করছেন।

কেমন সেসব যোগাযোগ?

কম্পিউটারের সামনে বসে লিখছিলেন সোয়েব মাহমুদ শুভ।

হঠাৎই তার স্ক্রীনে ভেসে উঠেছিল ছোট্ট একটি বার্তা—‘হাই’।

পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন তিনি, ‘কে তুমি’?

সেটা ছিল ২০০৫ সাল। নাইমার সঙ্গে সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তিন মাসের মাথায় প্রেমের প্রস্তাব দেন শুভ, শুনে একবারে আশ্চর্য হয়ে যান নাইমা।

“২৫শে ফেব্রুয়ারিতে ও আমাকে প্রপোজ করলো। আর আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম চিনিনা জানিনা ওই ছেলেটাকে আমি কী বলবো? কোনদিন দেখা হয়নি, মাত্র তিন মাসের পরিচয় তাও নেটে কতা হয়। ঠিক কথা বলছে কিনা তাও জানিনা। এরপর ওর সাথে সামনামসামনি দেখা হয়”।

রূপকথা আর লোককাহিনিতে অচেনা, অদেখা কিংবা সম্পূর্ণ অজানা কারো সঙ্গে নিমিষেই দুটি মনের বাধা পড়ার অনেক গল্প শোনা যায়।

কিন্তু বাস্তবে খোদ আজকের দিনেও বহু মানুষই আছেন যোগাযোগের প্রথম ধাপটি যাদের হয় নানারকম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

অনেকটা শুভ আর নাইমার মতোই।

কিন্তু অদেখা অজানা একজনকে প্রেমের প্রস্তাব দেবার ঝুঁকিওতো রয়েছে। যদি কল্পনার সাথে না মিলত?

শুভ বলছেন, তখন বয়স অনেক কম ছিল। সে ঝুঁকি নিয়েই তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন।

“ওকে যখন প্রথম দেখি তখন আমার এক বন্ধুও আমার সাথে ছিল। ওকে আমি তখন বলছিলাম সবই ঠিক তবে হাইটটা বোধয় একটু…।তবে আমার কাছে ওটা কোন ইস্যু মনে হয়নি। আমি যেমন চাইতাম তেমনই পেয়েছি মনে হয়। তবে আমি জানিনা আমার মনের মতো না হলে আমি কী করতাম! আমি এজন্য নিজেকে ভাগ্যবানই বলবো”।

বাংলাদেশে এখনও কোন ডেটিং সাইটের নাম জানা যায় না। ফলে বন্ধুর খোঁজে অনেকেই ঢুঁ মারেন ফেসবুকে কিংবা মেসেঞ্জারের মতো যোগাযোগ মাধ্যমে।

সেই বন্ধুত্ব কখনো বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ থাকে, আবার কখনো কেবল বন্ধুত্বের সীমা ছাড়িয়ে রূপ নেয় প্রণয় এবং কখনো তা গড়ায় পরিণয়েও।

বিষয়টি রোমাঞ্চকর হলেও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্বের খোঁজ করা নিয়ে রয়েছে বহু ভাবনাই।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ জীবনসঙ্গী কেন খুঁজতে যায়?

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলছেন, বিশ্বব্যাপীই এখন মানুষ পরিবার বা চারপাশের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কম কাটায়। সেকারণে পাশের বাড়ির ছেলেটি কিংবা মেয়েটির মধ্যে জীবন সঙ্গীর মানস এখন অনেক কম মানুষই খোঁজ করেন।

“সরাসরি যোগাযোগটা হচ্ছেনা ফলে চেনাজানার সুযোগটা এখানে কম হচ্ছে। পারস্পরিক যে ভাবের আদানপ্রদান সেটা প্রত্যক্ষভাবে হচ্ছেনা। আমরা এটাকে ‘লিকুইড মর্ডানিটি’ বলি -খুব সহজেই এটা মুছে যায়।এ সম্পর্কগুলো সামাজিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের ফল”।

তবে সমাজ বিজ্ঞানীরা যাই বলুন, কয়েক শতাব্দী আগেও অচেনা অজানা বা অদেখা কারো সঙ্গে হুট করে প্রেম হয়ে যাবার বিষয়টি বিরল ছিল না। বিরল নয় রূপকথাতেও।

রূপাঞ্জলের চুলের বেনি বেয়ে তার ঘরে উঠে আসা অদেখা রাজকুমারের সঙ্গেই মনের লেনদেন হয়েছিল তার।

আর প্রায় নয় বছর প্রেম করে গত ডিসেম্বরে পারিবারিক সম্মতি নিয়ে বিয়ে হয়ে গেছে পেশায় উন্নয়ন কর্মী শুভ আর চিকিৎসক নাইমা’র।



মন্তব্য চালু নেই