মরিচ চাষ করে সাফল্যের নজির দেখালেন আম্বিয়া বেগম

পাহাড়ের ঢালু জমিতে মরিচ চাষ করে সাফল্যের নজির দেখালেন আম্বিয়া বেগম। উপার্জন করছেন লাখ টাকা। আম্বিয়ার বাড়ি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ভাসাইন্যাদমে।

বলা যায়, একদম পুঁজি ছাড়াই শুধু পরিশ্রমের ফলেই দরিদ্র কিষাণী আম্বিয়া এখন লাখপতি। সংসারের অভাব-অনটন ঘুচিয়ে তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী। পরিবারে এনেছেন আর্থিক স্বচ্ছলতা। আর হাসি ফুটেছে পরিবারের সবার মুখে। তার সাফল্য দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্যরা।

এলাকাবাসী জানান, আম্বিয়া বেগম বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড়ের ঢালুতে মাত্র কয়েক শতক জমিতে উন্নত জাতের কিছু মরিচের চারা লাগিয়ে চাষাবাদ করেন। সেগুলো খুব যত্ন সহকারে পরিচর্যা করতে থাকেন তিনি। মাত্র ৫০ দিনের মাথায় অভাবনীয়ভাবে কাঁচা মরিচ ধরতে শুরু হয় গাছে গাছে।

আম্বিয়া জানান, এমন সফলতা আসবে নিজেও ভাবিনি। তবে মরিচ চাষে আমার এই সাফল্যের পেছনে মূখ্য ভূমিকাটা ছিল লংগদু উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা।

সংসারে খুব অভাব অনটন ছিল। চলতে হতো খুব কষ্টে। বাড়ির ধারে পাহাড়ের ঢালে নিজেদের কিছু ঢালু জায়গা ছিল পতিত। এ বছর বর্ষার কিছুটা সময়ের আগে সেটিকে সাফ করে আবাদ করি।

উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় উন্নত জাতের মরিচের চারা সংগ্রহ করে আবাদি জমিতে চাষ করি। চারাগুলো অল্পদিনেই বেড়ে উঠে। গাছে গাছে ধরে প্রচুর কাঁচা মরিচ। ৫০ দিনের মাথায় আসতে থাকে ফলন।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই সপ্তাহে ১০০-১২০ কেজি কাঁচা মরিচ বাজারে বিক্রি করতে পারি। প্রতি কেজি ১শ’ টাকায় কাঁচা মরিচ বিক্রি করে প্রতি সপ্তাহে উপার্জন আসে ১০-১২ হাজার টাকা। এভাবে গত প্রায় তিন মাস ধরে ক্ষেত থেকে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি। সামনে আরও অন্তত এক মাস বিক্রি করতে পারবো।

পরিশ্রম করে নারীরাও লাখ টাকা উপার্জন করতে পারে বলে জোর দিয়ে আম্বিয়া বলেন, মরিচ চাষের পাশাপাশি সামনে আদা ও হলুদের চাষও করবো।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রমণী কান্তি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের ঢালু জমিতে মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে আম্বিয়ার মতো পরিশ্রমী হলে যে কোনো কৃষকের পক্ষে লাখ টাকা উপার্জন করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, লংগদু উপজেলার আম্বিয়া বেগম মরিচ চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন, এটা তার পরিশ্রমের ফসল। যারা এভাবে আবাদ করতে চায় তাদের সরকার সহযোগিতা করবে। বর্তমানে এক ধরনের হাইব্রিড মরিচের চারা পাওয়া যায়। এই জাতের মরিচের চারা লাগানোর ৫০ দিনের মাথায় ফলন শুরু হয়। এতে করে সাশ্রয় হবে সময়। বাঁচবে খরচ।

তিনি বলেন, এভাবে পাহাড়ের পতিত ঢালু জমিতে কাঁচা মরিচ, আদা, হলুদ, আমলকি, জলপাই, লেবু, তেজপাতা, আনারস, আম, জাম, কলা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদে অভাবনীয় ফলন ও সফলতা দেখা যাচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই