মাগুরার শ্রীপুরে নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় চলছে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ

মাগুরা প্রতিনিধিঃ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার মৃত্যুর পর এখন সেখানে প্রায়ই চলছে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।

হত্যা মামলার আসামী পক্ষের পুরুষ লোকজন বাড়িঘর ছাড়ার সুযোগে গত ১৫ জুলাই থেকে ঘটছে এসব লুটপাটের ঘটনা। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে মামলার বাদী পক্ষের লোকজন আসামীপক্ষের দুই ব্যক্তির বাড়ি ঘর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে মালামাল লুট করেছে তারা।

এছাড়া প্রায় শতাধিক বিঘা জমির পাট জোরপূর্বক কেটে নিয়ে গেছে বাদী পক্ষের লোকজন। দিনে ও রাতে এসব ঘটনা ঘটে চললেও পুলিশ কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ। তবে পুলিশ বলছে, আসামী পক্ষের লোকজন নিজেরাই ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপাচ্ছে।

রোববার দুপুরে মদনপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তরা বাবলু শেখ ও লিটন খলিফার বাড়িতে আগুন দেয়। এতে উভয়ের দুটি ঘর আগুনে পুড়ে যায়। ভূক্তভোগী বাবলুর বড় ভাই আবদুল্লাহ শেখ বলেন, মামলার বাদী পক্ষের লোকজন তাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে দুটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আগুন দেওয়ার আগে বাড়ির মহিলাদের ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মালামাল লুট করেছে।

এছাড়া দুর্বৃত্তরা তাদের প্রায় ১৫ বিঘা জমির পাট জোরপূর্বক কেটে নিয়ে গেছে। অপর ক্ষতিগ্রস্থ সেলিম খলিফা বলেন, দুর্বৃত্তরা লুপপাট ও ঘরে আগুন দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়নি। তারা তাদের প্রায় ৭/৮ বিঘা জমির পাট কেটে নিয়ে গেছে। মদনপুর গ্রামের শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকরাম আলী বিশ্বাস বলেন, প্রতিপক্ষরা তার পবিারের সদস্যদের ৮ বিঘা জমির পাট কেটে নিয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, সব মিলিযে প্রায় শতাধিক বিঘা জমির পাট দুর্বৃত্তরা জোর পূর্বক কেটে নিয়ে গেছে। গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে দুর্বৃত্তরা প্রায় ৩০ টি বাড়ির বৌদুতিক মিটার ভেঙ্গে ফেলেছে। তাছাড়া হামলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর ভাঙাচোড়া অবস্থায় পড়ে আছে। আব্দুল্লাসহ নাম প্রকাশ না করার শর্তে মদনপুর গ্রামের একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বলেন, শ্রীপুর থানা পুলিশের আসকারায় মামলার বাদী পক্ষের লোকজন এসব অত্যাচার চালাচ্ছে। একদিকে পুলিশ দূরে দাড়িয়ে থাকছে, অন্যদিকে লুটপাটের ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে।

এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সাকির্ট থেকে দুটি ঘরে আগুন লেগেছে। আসামী পকেক্ষর লোকজন নিজেরাই বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট করে প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপাচ্ছে। তবে আব্দুল্লাহ শেখ বলেন, পুলিশ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার কথা বল্লেও। যে দুটি ঘর আগুনে পুড়েছে সেখানে বৈদ্যুতিক লাইনই ছিলো না।

তবে পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ বলেন, পরস্পর বিরোধী বক্তব্য শুনেছেন। ইতোমধ্যে নিজে পুরো ঘটনা তদন্ত করছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তে গাফলতির প্রমান পেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের পরের দিন ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রীপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের মাদ্রাসার সম্মুখে একটি দোকানে শ্রীপুর সদর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী রজব মোল্যা ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আইনাল মজুমদার ওরফে নাজির মজুমদারের সমর্থকদের মধ্যে ভোট দেয়া না দেয়া নিয়ে বচসা হয়।

এরই এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে শ্রীপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক খলিলুর রহমান গুরুতর জখম হয়। দীর্ঘ ২ মাস ২১ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হামপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নিহত খলিল মদনপুর গ্রামের কওছার বিশ্বাসের ছেলে। গত ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে তিনি মেম্বার প্রার্থী আইনাল মজুমদার ওরফে নাজির মজুমদারের পক্ষে কাজ করেছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই