মাথা কেটে অন্য আস্ত মাথা লাগাবেন ইনি, খরচ ১০ কোটি ডলার!

তার মাথাটা আমূল বদলে দিতে চান তিনি! তাই মাথাটা তিনি তুলে দিয়েছেন ডাক্তারদের হাতে! হাতে মাথা কাটবেন তারা ভ্যালেরি স্পিরিদোনভের।

তারপর ঠিক সেই জায়গাতেই স্পিরিদোনভের অসাড় দেহটির ওপর বসিয়ে দেবেন অন্য একটা আস্ত মাথা! সেই ‘মগজমিটার’টা চলবে একেবারে নির্ভুল অঙ্কে। আমার, আপনার মাথা যেভাবে, যে নিয়মে চলে ঠিক সেইভাবেই।

কোনো গল্প কথা নয়, নয় কোনো কল্পকাহিনীও। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্জারির জন্য তার মাথা ডাক্তারদের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে একেবারে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন ৩১ বছর বয়সী স্পিরিদোনভ।

তার বাড়ি মস্কোর পূর্ব প্রান্তে। প্রযুক্তি-প্রকৌশলে বেশ দড় স্পিরিদোনভ একটি শিক্ষামূলক সফ্‌টওয়্যার সংস্থা চালান। কিন্তু প্রায় আকৈশোরই ভুগছেন তিনি ভার্দনিগ-হফম্যান ডিজিজে। বেশ জটিল রোগ।

শরীরের জিনগুলোর সজ্জায় খুব বড় রকমের গণ্ডগোল হলে তা ধীরে ধীরে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে রোগীর পেশিগুলোকে। যেভাবে উঁইপোকা আস্ত একটা কাঠ খেয়ে ফেলে, ঠিক সেই ভাবেই!

তা একইভাবে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে মগজের মধ্যে থাকা সবক’টা মোটর নিউরনকে। হাত-পা কখন কীভাবে নাড়াতে হবে, কখন কোন দিকে তাকাতে হবে, গায়ের কোন দিকে মশা বা মাছি বসেছে আর তা কোন হাত দিয়ে মারলে বা তাড়ালে সুবিধা হবে, এমন যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মের নির্দেশটা আসে ওই মোটর নিউরনগুলো থেকেই।

সেই নির্দেশ মোতাবেকই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ‘হুকুম’ তামিল করে যায়, ‘জো হুজুর’ বলে। ফলে মোটর নিউরনে গণ্ডগোল হলে বা তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ কার্যত চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়ে।

একই অবস্থা স্পিরিদোনভের। তিনি

করতে পারেন সামান্য কয়েকটি কাজ। জয়স্টিক দিয়ে মুখে তুলতে পারেন খাবার-দাবার। হাতে চাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চালাতে পারেন হুইলচেয়ার।
পারেন টাইপ করতে। তা-ও বেশ ক্ষণ একটানা করতে পারেন না। একটু কাজ করেই জিরিয়ে নিতে হয়।

‘এ মানুষ বাঁচে না। বাঁচবেও না। আজ না হলে কাল আয়ু ফুরবেই স্পিরিদোনভের’, সটান বলে দিয়েছিলেন বহু ডাক্তারই।

কীভাবে বাঁচা সম্ভব হতে পারে স্পিরিদোনভের?

চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, একমাত্র নিজের মাথাটা যদি বদলে ফেলতে পারতেন স্পিরিদোনভ তা হলেই তার পক্ষে ‘বাঁচা’ সম্ভব হতে পারে!

কিন্তু মাথা বদলে ফেলতে হলে তো মাথা কাটতে হবে আগে। তারপর সেই জায়গায় আরেকটা মাথা বসাতে হবে। কিন্তু কেই-বা বাঁচার শখে নিজের মাথা কাটতে দিতে চান?

হাতে মাথা কাটার জন্য (মুন্ড প্রতিস্থাপন) কিন্তু বহু দিন ধরেই দুই নিউরোসার্জেন বিস্তর রোগী খুঁজে চলছিলেন। ৫৫ বছর বয়সী চীনা সার্জেন শিয়াওপিং রেন আর ৫১ বছর বয়সী মাথা কামানো মোটাসোটা ইতালিয় নিউরোসার্জেন সের্গিও ক্যানাভেরো।

গবেষক, নিউরো-সায়েন্টিস্টদের মধ্যে দু’জনেই সমান জনপ্রিয়। মার্কিন মুলুকে একটি সুজটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শুয়োরের সামনের একটা পা দিয়ে তিনি মানুষের হাত প্রতিস্থাপনে করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন।

সেই প্রতিস্থাপনের স্বীকৃতি হিসেবে তার সহযোগী গবেষকরা রেনকে একটি ট্রফি দিয়েছিলেন। যে ট্রফিটি ব্রোঞ্জ দিয়ে বানানো শুয়োরের একটি কান! আর ইতালিয় নিউরো-সার্জেন ক্যানাভেরো নিজেকে সবসময়েই ‘ডক্টর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’-এর সঙ্গে তুলনা করতে ভালোবাসেন।

বছর তিনেক আগে একেবারে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে যিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মানুষের মাথা প্রতিস্থাপন করতে চান।

কিন্তু কেউই শখ করে তাদের হাতে নিজেদের মাথা তুলে দিতে রাজি হননি। কেউই তাদের মাথা কাটতে দিতে চাননি! শেষমেশ রাজি হলেন স্পিরিদোনভই। ‘আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনে খবরটি ছাপা হয়েছে সম্প্রতি।

সেখানে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের গোড়ার দিকেই ওই মুন্ড প্রতিস্থাপন করা হবে স্পিরিদোনভের। অপারেশন থিয়েটারে থাকবেন বিশ্বের বিশিষ্ট ৮০ জন নিউরো-সার্জেন। খরচ পড়বে প্রায় ১০ কোটি ডলার।

সাফল্যের সম্ভাবনা কতটা?

‘অন্তত ৯০ শতাংশ’, এমনটাই দাবি করা হয়েছে ওই ম্যাগাজিনে। যদিও ওই খবরটি বেরনোর পর দুই সার্জেন রেন ও ক্যানাভেরোর সমালোচনায় উত্তাল হয়ে উঠেছেন নিউরো-সায়েন্টিস্টদের একাংশ।

কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, অপারেশন থিয়েটারে স্পিরিদোনভের অকাল মৃত্যু হলে খুনের দায়ে ওই দুই সার্জেনকেই গ্রেফতার করতে হবে।

তবে প্রতিস্থাপনের জন্য মানুষের মুন্ড পেতে খুব একটা কালঘাম ছোটেনি নিউরো-সার্জেনদের! খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ‘ব্রেন ডেড’ এক ‘ডোনার’কে। তিনি এক জন নামডাকওয়ালা পিয়ানোবাদক। তার পরিবারের তরফে মুন্ড-দানের লিখিত প্রতিশ্রুতিও আদায় করে নিতে পেরেছেন নিউরো-সার্জেনরা!

ধরা গেল, সফলই হলো সেই মুন্ড প্রতিস্থাপনের বিরলতম অস্ত্রোপচার। কিন্তু যেটা প্রশ্ন, তা হলো- প্রতিস্থাপনের পর স্পিরিদোনভের মাথা কোন সুরে বাজবে? কোন তারে বাঁধা থাকবে তার সুর?

পিয়ানোবাদকের সুর-ভাবনায়? নাকি স্পিরিদোনভের প্রকৌশলী চিন্তা-ভাবনার যান্ত্রিক গাণিতিক ছন্দে, তালে?

নাকি, দুই ‘তাল’ মিলেমিশে গিয়ে নতুন মাথার স্পিরিদোনভ হয়ে উঠবেন দুই ‘সুরে’র দ্বিবেণী সঙ্গম?



মন্তব্য চালু নেই