‘মানবপাচারে জিরো টলারেন্স’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবৈধ মানবপাচারের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দশম সংসদের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনে বুধবার প্রশ্নোত্তর পর্বে ময়মনসিংহ-২ আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমদের টেবিলে উত্থাপিত এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ সব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে প্রতি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন করা হয়েছে। আইনে মানবপাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সমুদ্রপথে অবৈধভাবে বিদেশ গমনকালে আজ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩৬ জন বিদেশগামী নাগরিককে সাগর থেকে আটক করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবির ঐকান্তিক তৎপরতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত ১৫০০ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ১ হাজার ৯৪ জন, শিশু ৪০৬ জন। এতে ২০১৪ সালে নারী উদ্ধার করা হয় ৮৫২ জন, শিশু ৩১৭ জন। এছাড়া ২০১৫ সালে নারী উদ্ধার করা হয় ২৪২ জন এবং শিশু উদ্ধার করা হয় ৪০৬ জন। এই সময়ে ২৭ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। একই সময় মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ৪৪৮টি মামলা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মানবপাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং মানবপাচারকারীরা আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও উন্নত ও অত্যাধুনিক ট্রেনিং প্রদান করার লক্ষ্যে জাতীয় পরিকল্পনা ২০১২-১৪ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়াও মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৫-১৭ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভা প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশুপাচার সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি মনিটর করার বিষয় কমিটিতে পর্যালোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ হতে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মানবপাচার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোস্ট গার্ডের বর্তমান সময়ের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়েছে। কোস্টগার্ডের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের একটি পেট্রোল ক্রাফট এবং একটি অত্যাধুনিক হাইস্পিড মেটাল শার্ক বোর্ড সর্বক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম ও গহিরা অঞ্চলে টহলে নিয়োজিত রয়েছে। টহল কার্যক্রম আরও বৃদ্ধির জন্য একটি করে হাইস্পিড মেটাল শার্ক বোট কুতুবদিয়া এবং সাঙ্গু স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে। এ টহল কার্যক্রম আরও বৃদ্ধির জন্য একটি করে হাইস্পিড মেটাল শার্ক বোট কুতুবদিয়া এবং সাঙ্গু স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শাহপুরী, টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন্স উপকূলীয় অঞ্চলে ২টি অত্যাধুনিক হাইস্পিড মেটাল শার্ক বোট দিয়ে টহল করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পেনশন প্রথা প্রচলনের পরিকল্পনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকার সবসময়েই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। শুধু রাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে নয়, দেশে যাতে ব্যক্তি খাতে দেশে ও বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় তা আমরা নিশ্চিত করেছি।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সরকারি এবং বেসরকারি খাতে কাজের প্রকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন বিধায় উভয় ক্ষেত্রে পারস্পরিক তুলনা যোগ্য নয়। তাই পেনশনের বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পেনশন প্রথা প্রচলনের কোনো পরিকল্পনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এ বিষয়ে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের আওতায় একটি সমীক্ষা পরিচালনা করার প্রস্তাবও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই