মানুষের স্রোত এখন নগরমুখী

ঈদের চার দিনের ছুটির পর দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির আগে এক দিনের কর্মদিবসে সেভাবে রাজধানীতে আসেনি মানুষ। কিন্তু শনিবার ভোর থেকে কী বাস, কী ট্রেন, কী লঞ্চ, সব জায়গায় শুরু হয়েছে নগরমুখী মানুষের স্রোত। তবে বাড়ি ফেরার মতোই নগরে ফেরার পথেও ট্রেনে ভিড় তুলনামূলক বেশি। আসলে প্রতিটি ট্রেনই ঢাকায় এসেছে উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে।

রাজধানীর কমলাপুরে এমনিতে ট্রেনগুলো আসে অল্প যাত্রী নিয়েই। কারণ, অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেমে যায় বিমানবন্দর স্টেশনেই। কিন্তু ঈদের পর কমলাপুরেও ট্রেনগুলো এসেছে যাত্রী ভর্তি হয়ে। ঈদের দুদিন আগে বাড়ি যাওয়ার সময় ট্রেনগুলো সময় মতো ছাড়তে না পারলেও সকাল থেকে বেশিরভাগ ট্রেনই কমলাপুর ফিরেছে নির্ধারিত সময়েই।

তবে যেসব ট্রেন দেরি করছে তার একটি রংপুর এক্সপ্রেস। ঈদের আগে সবচেয়ে বেশি বিলম্বে যাত্রা করেছিল যে কয়টি ট্রেন তার এক এই রংপুর এক্সপ্রেস। ফেরার পথেও এই ট্রেনটিই সবচেয়ে বেশি দেরিতে নগরে এসেছে। ট্রেনটি নয়টায় কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছার কথা থাকলেও বেলা এগারটাতেও পৌঁছতে পারেনি।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন থেকে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে আসা মহুয়া এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, জামালপুরের অগ্নিবিনা এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ও তিস্তা এক্সপ্রেস, গাজীপুরের জয়দেবপুর কমিউটার, টঙ্গী কমিউটার ও তুরাগ এক্সপ্রেস, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস কমিউটার, দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জের এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহের বলাকা এক্সপ্রেস, রাজশাহীর ধুমকেতু এক্সপ্রেস, খুলনার সুন্দরবন এক্সপ্রেস, সিলেটের পারাবত এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতীসহ মোট ১৪টি ট্রেন কমলাপুরে এসেছে। প্রতিটি ট্রেনই যাত্রী ভর্তি হয়েই এসেছে ঢাকায়। তবে বেশিরভাগ যাত্রীই নেমে গেছে বিমানবন্দর স্টেশনে।

খুলনা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে রাজধানীতে ফিরছেন আবির রহমান। তিনি একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। যাত্রা পথের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। যাত্রী ভোগান্তি নেই বললে চলে এবার।’

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘দুই একটি ঘটনা ছাড়া এবারের ঈদযাত্রা ছিল নির্বিঘ্ন। আজ প্রায় সব ট্রেনই নিধারিত সময়েই কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছে এবং ছেড়ে যায়। তবে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি একটু বিলম্বে পৌঁছেবে। তবে আগামীকাল সাপ্তাহিক ছুটি রংপুর এক্সপ্রেসের পরশু থেকে এই ট্রেনের সময় ঠিক হয়ে যাবে।’

সিতাংশু বলেন, ‘আজ সব মিলিয়ে ৬৮টি ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে যাবে এবং ঢাকায় ফিরবে।’

ফেরার পথে বাসে ভোগান্তি কম

এবার বাসে করে বাড়ি যাওয়ার পথে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের সব কটি রুটেই যানজনের ভোগান্তি ছিল অসহনীয়। দীর্ঘ যানজটের কারণে ঈদের দুই দিন আগ পর্যন্ত গাবতলী বা মহাখালী টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে।

সহকর্মী হাবিবুর রহমান ফিরেছেন কুড়িগ্রাম থেকে। তিনি জানান, ফেরার পথে টিকিট সংকটের কারণে গত তিন ধরেই রাজধানীমুখি মানুষের যাত্রা পিছিয়ে যাচ্ছে। বাসের ভেতরে আসন না পেয়ে ছাদে চেপেও মানুষ আসছে রাজধানীতে। তবে সড়কে তেমন ভিড় না থাকায় ফেরার পথে যাত্রা ছিল নির্বিঘ্ন। নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে যায় বাসগুলো।

তবে শনিবার সকাল থেকেই মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ছে। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে যানজটও তৈরি হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আড়াইশ বাস ও একশ ছোট গাড়ি ঘাটে নদী পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। নদী ভাঙনের কারণে ভেঙে যাওয়া দুই নম্বর ঘাটটি মেরামতের কাজ চলছে। বর্তমানে তিনটি ঘাট নিয়ে গাড়ি পারাপার চলছে।

দক্ষিণ থেকে লঞ্চ এসেছে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হয়ে

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা এবং চাঁদপুরের যাত্রীরা বরাবরেই রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে নৌপথকেই প্রাধান্য দেয়। ঈদে বাড়ি যাওয়ার মতোই ফেরার পথে প্রতিটি লঞ্চেই গত দুই দিন ধরে ভিড় উপচেপড়া। অতিরিক্ত যাত্রী নিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন হুঁশিয়ারি থাকলেও সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো নজরদারিই চোখে পড়েনি।

শুক্রবার বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছে ১৪টি লঞ্চ, পটুয়াখালী থেকে এসেছে ছয়টি। এমনিতে ভোর পাঁচটার মধ্যে সদরঘাটে পৌঁছার পর সন্ধ্যা বা রাতে আবার উল্টোপথে যাত্রা শুরু করার কথা। কিন্তু আজ রাত তিনটার দিকে সদরঘাট পৌঁছেই যাত্রী না নিয়েই আবার সেগুলো রওয়ানা দিয়েছে উল্টোপথে। সেখানে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষা করে আছে ঢাকায় আসার জন্য।

পটুয়াখালী থেকে আসা সহকর্মী বোরহান উদ্দিন জানান, শুক্রবার যারা লঞ্চের আগাম টিকিট কেটেছিলেন তাদেরকে নদীবন্দরে আসতে হয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। কারণ টিকিট নেয়ার সময়ই বলে দেয়া হয়েছিল ঈদের পর যাত্রী বোঝাই হয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ের জন্য বসে থাকবে না কোনো লঞ্চ।

ঘাটে এসে তেমনটিই দেখা গেছে। এম ভি এ আর খান, সুন্দরবন-১১, প্রিন্স অব রাসেল, কুয়াকাটা-১ লঞ্চ বিকাল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে ছেড়ে দেয়ার কথা থাকলেও সবগুলো লঞ্চ দুপুর দুইটার মধ্যে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।



মন্তব্য চালু নেই