মার্কিন অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে মোবাইলে ‘সেক্সটিং’

৬ ইঞ্চির ছোট্ট একটা মোবাইল! বদলে দিয়েছে জীবনটা৷ খাদের ধারে নিয়ে এসেছে বছর ১৩-র মেয়েটিকে৷ স্কুলে যাওয়া বন্ধ৷ বাড়িতে নিজের ঘরে স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে রয়েছে মাওরিন (নাম পরিবর্তিত)৷ বাবা-মা তো কোন ছার, ছোটবোনের সঙ্গেও ঠিক করে কথা বলছে না৷ মেয়েটা কখন যে কী করে বসে এই চিন্তায় ঘুম উড়েছে মাইকেল আর এলিজাবেথের৷ অথচ কী হাসিখুশি-ই না ছিল মাওরিন৷ ভালো গানের গলা ছিল৷ এখন গান তো দূরের কথা, প্রয়োজন না পড়লে মুখ ফুটে একটি কথাও বেরোয় না৷ যত নষ্টের মূলে ওই মোবাইল! কী কূক্ষণে যে ক্লাস সেভেনের মেয়ের হাতে মোবাইল তুলে দিয়েছিলেন, তা ভেবেই এখন কপাল চাপড়ান মাইকেল আর এলিজাবেথ৷

দুর্ঘটনাটা ঘটল মোবাইল হাতে পাওয়ার কয়েকমাসের মধ্যেই৷ বাবা-মা জানতেই পারেননি স্কুলেরই এক সহপাঠীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে মেয়ে৷ মাওরিনের বয়স ১৩ হয়েছে৷ এই বয়সে কাউকে ভালোলাগা দোষের নয়, অস্বাভাবিকও নয়৷ প্রথমে স্কুলেই ছুটির পর টুকটাক কথা হত, মোবাইল হাতে আসার পর শুরু হল টেক্সট চালাচালি৷ রাত জেগে দুই টিনএজারের ‘প্রেমালাপ’জমে উঠতে সময় নেয়নি৷ এরপর ছেলেটি আচমকাই মাওরিনকে নগ্ন ছবি পাঠানোর আবদার করে৷ প্রথমে রাজি ছিল না মাওরিন৷ কিন্ত্ত ছেলেটির কাতর অনুরোধের কাছে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিল সে৷

– ‘তোমার অত সুন্দর শরীরকে আর আড়াল করে রেখো না৷’

– ‘প্লিজ, একটা ছবি পাঠাও৷ কথা দিচ্ছি ডিলিট করে দেব৷’

ছেলেটির একের পর এক মেসেজে শেষমেশ ছবি পাঠায় মাওরিন৷ তবে একেবারে নগ্ন নয়৷ গায়ের অন্তর্বাসটুকু রেখে দিয়েছিল৷ তাতেও সাধ মেটেনি ছেলেটির৷ মাওরিনের নগ্ন ছবি নিয়েই ক্ষান্ত দেয় সে৷ এই ‘প্রেম’অবশ্য চটকে যেতে খুব একটা সময় নেয়নি৷ ‘সম্পর্ক’থেকে বেরিয়ে আসার সময় মাওরিন সব ছবি ডিলিট করার অনুরোধ করে৷ ছেলেটিও ভালো মুখ করে জানায়,’সব ছবি ডিলিট করে দিয়েছি৷’

কিন্ত্ত না! মিথ্যে কথা বলেছিল৷ মাওরিনের তিনটি নগ্ন ছবি মোবাইলে রেখে দিয়েছিল ছেলেটি৷ ক্লাসেরই অন্য একটি মেয়েকে মাওরিনের নগ্ন ছবি দেখিয়েও দেয়৷ এরপর রাষ্ট্র হতে আর সময় লাগেনি৷ গোটা স্কুল জেনে যায়’কেচ্ছা’র কথা৷ সকলে মাওরিনকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দেয়৷
ভয়ে, লজ্জায়, অপমানে এরপর স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় মাওরিন৷ প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে সময় লেগেছিল মাইকেল, এলিজাবেথেরও৷ কিন্ত্ত মেয়েকে স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে যেতে দেখে ভয় পেয়ে যান তাঁরা৷ বারবার বোঝাতে থাকেন মাওরিনকে৷

তিতিবিরক্ত মাওরিন একদিন চিত্‍কার করে ওঠে -‘তোমরা বুঝবে না৷ চুপ করো৷’
– ‘তাহলে আমাদেরকে বোঝাও৷ আমরাও বুঝতে চাই৷’ কাতর অনুরোধ এলিজাবেথের৷

সেদিন না হলেও কয়েকদিন পর মায়ের কাছে মুখ খোলে মাওরিন৷’ও আমার ছবি সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে ঠিক আছে৷ কিন্ত্ত বলছে আমি না কি ওর প্রেমে এতটাই পাগল ছিলাম যে যেচেই ওইসব ছবি পাঠিয়েছি৷ আমার নগ্ন ছবি নিয়ে ওর কোনও আগ্রহই ছিল না৷’সম্যসাটা বুঝতে পারেন মা৷ বিপদ আরও বাড়ায় সোশ্যাল মিডিয়া৷ মাওরিনের ফেসবুক ওয়ালে সহপাঠীরা লিখতে থাকে, ‘বেশ্যা’,থুথু ফেলে ডুবে মরো’ধরনের কমেন্ট৷ মানসিক রোগী হয়ে ওঠে মেয়েটি৷ মাওরিনকে কাউন্সেলিংয়ের জন্য নিয়ে যান বাবা-মা৷ ১৩ বছরের মেয়েটির জীবন থেকে অঙ্ক, ইতিহাস, বিজ্ঞানের দুনিয়াটাই হারিয়ে যায়৷

স্কুলে প্রিন্সিপালের কাছে ছেলেটির নামে অভিযোগ জানান মাইকেল ও এলিজাবেথ৷ ছেলেটিকে পাকড়াও করতেই প্রিন্সিপালের চক্ষু চড়কগাছ৷ মোবাইলের পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড অ্যাপ খুলতেই পর্দা ফাঁস৷ শুধু মাওরিন নয়, ক্লাসের আরও চারটি মেয়ের নগ্ন ছবি সেখানে রাখা৷ প্রত্যেকটি মেয়ের নামে আলাদা আলাদা ফোল্ডার বানিয়ে রেখেছে গুণধর৷ ওই ছবি নিয়ে ‘মজার খেলায়’মেতেছিল সে৷ টেক-স্যাভি ছেলেটি প্রত্যেকের মুখ ঝাপসা করে নগ্ন ছবি বন্ধুদের দেখাত৷ চ্যালেঞ্জটা ছিল শরীর দেখে মেয়েদেরকে চেনার৷

কিছুটা যেন স্বস্তি পায় মাওরিন৷ বোঝে সে একা নয়, ছেলেটির জালে ফেঁসেছিল আরও অনেকেই৷ দেখা যায় প্রত্যেকের অভিজ্ঞতাই এক৷ কথার জাদুতে সবাইকে ভুলিয়েছে সে৷ একই টেক্সট সবাইকে পাঠাত৷ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে মাওরিন৷ এখন সে ক্লাস নাইনের ছাত্রী৷ দু’বছর আগের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলছে৷ স্কুলের প্রেয়ার হলে প্রায়ই মুখোমুখি হয় ছেলেটির৷ মাওরিনের কথায়,’আমার তাতে কিছু যায় আসে না৷ ও চাইলেও আমাকে দুঃখ বা ভয় দেখাতে পারবে না৷ এখন আমি মাথা উঁচু করে চলি৷’

ছেলেটির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷ দোষী প্রমাণিত হলে জুভেনাইল আইনে জেলও খাটতে হবে৷ ততদিন অবশ্য স্কুল করায় কোনও বাঁধা নেই৷
মাওরিন স্বাভাবিক হলেও চিন্তা যায়নি মাইকেল আর এলিজাবেথের৷ তাঁদের ছোটমেয়ের ক্ষেত্রে আর একভুল করতে চান না তাঁরা৷ মোবাইল নৈব নৈব চ! মাইকেলের কথায়,’আমাদের কিশোর বয়সে এসব ভাবাই যেত না৷ মেয়েকে নিজের বাড়ি লুকিয়ে, ছেলেটিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে নির্জন স্থানে গিয়ে জামাকাপড় খুলতে হত৷ এখন তো ঘরে বসেই এক ক্লিকে নগ্ন ছবি পৌঁছে যাচ্ছে৷’

তাই মাইকেলের প্রতিজ্ঞা, ছোটমেয়ে যতই জেদ করুক ১৮ না হলে কিছুতেই হাতে মোবাইল দেবেন না৷ কিন্ত্ত ১৮-র পরও কি পার পাবে? মাইকেলের দাওয়াই,’সাবধান মেয়েরা, কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করো না৷ ডিজিটাল দুনিয়ায় মেপে পা ফেল৷’ – সংবাদসংস্থা



মন্তব্য চালু নেই