মার্চে শুরু হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ

সুন্দরবনের কাছে রামপালের প্রস্তাবিত জায়গায় বিদ্রুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরুর প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে আগামী মার্চ মাসের শেষের যেকোনো সময়ে নির্মাণ কাজের শুরু হবে। সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

রামপালে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিট থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

খুলনার বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় প্রকল্পের ৯১৫ একর জমির মাটি ভরাট কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প এলাকা ঘিরে উঁচু প্রাচীর, ৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, প্রয়োজনীয় অফিস ও আবাসন এবং কেয়ারটেকারদের বাসস্থান নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মূল প্লান্টের পশ্চিম পাশে পশুর নদীতে দু’টি পল্টুন ও জেটি স্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরঙ্গা ইউনিয়নের সাপমারী-কাটাখালী এবং কাইগর্দাশকাঠি মৌজার ৯১৫ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রি পাওয়ার কোম্পানি এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। এজন্য ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) এক সমঝোতা স্মারক সই করে।

সূত্র মতে, আগামী মাসের শেষনাগাদ মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এজন্য দিনরাত কয়েকশত জনবল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

মোট ৯১৫ একরের মধ্যে ৪২০ একর জুড়ে হবে বিদ্যুৎকেন্দ্র। কাজটি ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হেবি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড অব ইন্ডিয়া মূল প্লান্ট নির্মাণ করবে। অবশিষ্ট জমিতে কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং শ্রমিকদের আবাস স্থল, স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

সরকারি হিসাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবন থেকে ২১ কিলোমিটার এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশের বিপিডিবি এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) সমান-সমান ৫০ শতাংশ করে মালিকানায় থাকবে।

প্রকল্পে মোট ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ৭০ শতাংশ ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক ঋণ হিসেবে দেয়ার কথা রয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ করে বাংলাদেশ ও ভারতীয় কোম্পানি সরবরাহ করবে। উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই কিনবে বাংলাদেশ। লভ্যাংশও সমান-সমানভাবে বন্টন হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে। প্রকল্পের জন্য জমি দীর্ঘ মেয়াদে গঠিত মৈত্রি কোম্পানির অনুকূলে লীজ দিয়েছে সরকার। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের দাবির প্রেক্ষিতে লীজের টাকার পরিমাণ পরবির্তিতে কমানো হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ৯০২ ফুট উঁচু চিমনি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রতিদিন ১১ হাজার টন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহার হবে এবং এসব কয়লা ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হবে। সুন্দরবনের পশুর নদি ব্যবহার করে আমদানিকৃত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের ক্ষতি হবে দাবি করে দেশের রাজনৈতিক দল, বাম সংগঠন ও বিভিন্ন সংগঠন রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদ করে আসছে। তেল, গ্যাস, খণিজ সম্পদ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এর বিরুদ্ধে হরতাল পর্যন্ত করেছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল খুলনামুখি লংমার্চ পর্যন্ত করেছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এখনো সমালোচনা চলছে।



মন্তব্য চালু নেই