মালেক-নেছারের হাতেই ওলামা দলের ১০ বছর!

বিএনপির মতো দলটির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলকে একই রোগে পেয়েছে। গত ১০ বছর ধরে একই নেতা সংগঠনের কাণ্ডারি। গ্রুপিংও আছে অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মতো।দলীয় কর্মসূচিতে শীর্ষ নেতাদেরকে কর্মীদের নিয়ে আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করতেও দেখা গেছে। ইতিমধ্যে এক গ্রুপ পুরানো নেতাদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নতুন কমিটিও জমা দিয়েছেন। যদিও এখনও তার অনুমোদন মেলেনি।

এদিকে ওলামা দলের সাংগঠনিক সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমদ তালুকদারকে দায়িত্ব দিলেও দুই বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসের প্রতিনিধির সঙ্গে অনেকটা অশোভন আচরণ করেন।

তিনি বলেন, “এই ধরনের নির্দেশনার কথা কে বলেছে আপনাকে? কোথায় পান এসব খবর।”

প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ইসলামী চিন্তাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ওলামা দল গঠন করেন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান। কিন্তু সংগঠনের নেতারা এখন যেন মিলাদ, দোয়া আর জানাজাতেই আটকে আছেন।

যেখানে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ইসলামি দলগুলো রাজপথে থাকে তখন ওলামা দলের পক্ষ থেকে বিবৃতিও জোটে না। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের মধ্যে ক্ষোভ আছে বলে জানা গেছে। এসব কারণে প্রখ্যাত আলেম-ওলামারা সংগঠনটিতে যুক্ত হচ্ছেন না।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে গঠন হলেও নব্বই দশকে ওলামা দলের প্রথম কাউন্সিল হয়।এতে মাওলানা এসএম রুহুল আমিন সভাপতি ও মোয়াজ্জেম হোসেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ১৯৯৭ সালে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে মজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে (বর্তমানে ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত) আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন দলের চেয়ারপারসন। পরবর্তী সময়ে মজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বিএনপি থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেন।

সবশেষ ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর হাফেজ আবদুল মালেককে সভাপতি এবং হাফেজ মাওলানা নেছারুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর আর কমিটি হয়নি ওলামা দলের। ওই কমিটির অনেকে এরই মধ্যে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। আবার অনেকে মারাও গেছেন। তবে এতদিনে সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সভা পর্যন্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা।

আর কেন্দ্রীয় কমিটির যখন এই অবস্থা তখন সারা দেশে ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটির প্রায় পুরোটাই মেয়াদোত্তীর্ণ। আর অনেক জায়গায় ওলামা দলের কোনো কার্যক্রমই নেই। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। আর ৪৯টি থানার মধ্যে নামেমাত্র কমিটি রয়েছে অর্ধেকের।

দলটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ইচ্ছেমতো সংগঠন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা ছাড়াই। সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদক পদে রয়েছেন দুইজন। এসবের প্রতিবাদ করলে শীর্ষ ‍দুই নেতার বিরুদ্ধে বহিষ্কারের হুমকির অভিযোগও আছে।

এদিকে ২০১২ সালের ৩০ জুলাই সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে ঢাকার দুই মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণার লিখিত আবেদন জানান বেশ কয়েকটি থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো উদ্যোগই নেননি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ৬ আগস্ট দলের অচলাবস্থা নিরসনে খালেদা জিয়ার কাছে নতুন কমিটি দেয়ার আবেদন জানান দলটির ১১৮ জন নেতা। একই সঙ্গে তারা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সংগঠনটির নাজুক পরিস্থিতির কথা অবহিত করেন।

পরে তিনি সংগঠনটির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেন বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করলেও অদৃশ্য কারণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, দল পুনর্গঠনের ঘোষণার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। পদ পদবীর আশায় পৃথকভাবে নিজেদের মতো করে প্রত্যাশিত কমিটির তালিকাও জমা দিয়েছেন চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “যোগ্য নেতৃত্বের কাছে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেয়া হলে ওলামা দল আরও সম্প্রসারিত হয়ে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। দলের প্রতিষ্ঠাতা যে উদ্দেশে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এখন তা কল্পনার মতো মনে হয়। কিন্তু তার সেই চিন্তাকে বাস্তবায়ন করতে পারলে দল উপকৃত হতো।”

সংগঠনটির আরেকজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার

শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, “দলীয় কর্মসূচিগুলোতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভাগ করে কোরআন তেলাওয়াত পড়াতেই ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল বা দলীয় কোনো নেতার জন্মবার্ষিকী মৃত্যুবার্ষিকী, জানাজাতে গুটিকয়েক নেতা হাজির হন। ইসলামবিরোধী কোনো ইস্যুতে রাজপথে নামা তো দূরের কথা একটি বিবৃতি দেননি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।”

যদিও অবশ্য সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক।তিনি  বলেন, “বর্তমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে কয়েক বছর হয়ে গেছে। দলের চেয়ারপারসনের কাছে নতুন কমিটি দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। তিনি সংগঠন গোছানোর কথা বলেছেন। আমরা সেভাবে গোছাচ্ছি।” বিএনপির অন্যান্য ও সহযোগী সংগঠনের কর্মকাণ্ডের পর তাদের সংগঠন নিয়ে আলোচনা করারও পরামর্শ দেন তিনি। আর সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. নেছারুল হক হজে যাওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই