মালয়েশিয়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে বাংলাদেশি বন্দীদের

মালয়েশিয়ায় কারাগারে বন্দী বাংলাদেশিদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। প্রায়ই বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। কারাগারে বিভিন্ন দেশের বন্দীরা থাকলেও বাংলাদেশিরা বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমনকি নির্যাতনের কারণে কেউ কেউ মারা যান।

বন্দীরা দীর্ঘদিন জেলে বা ক্যাম্পে থাকলেও অর্থ-সংকটের কারণে দেশেও ফিরতে পারছেন না, অনেকে চালাতে পারছেন না আইনি লড়াইও। এসব বন্দীকে মুক্ত করতে বাংলাদেশ দূতাবাস তৎপর নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রবাসীরা বলছেন, বিদেশি কারাগারে বিপুল সংখ্যক নাগরিকের বন্দী থাকা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। জীবিকার তাগিদে অবৈধ অভিবাসী হলে সে দায় শুধু ব্যক্তির নয়; রাষ্ট্রেরও। সরকার প্রধান বারবার বলে আসছেন প্রবাসীদের কারণেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল। প্রবাসীরা দেশের সোনার ছেলে। কিন্তু প্রবাসীদের কল্যাণে আশানুরুপ সেবা দিতে দূতাবাস ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতার কারণেই বছরের পর বছর বিদেশের কারাগারে প্রবাসীরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন।

এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য বিভাগের প্রতিদিনের চিরুনি অভিযানে এখন পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে ইমিগ্রেশন বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, লাঙ্গ, জুরুত, তানাহ মেরায়, মাচাপ উম্বু, পেকা নানাস, আজিল, কেএলআইএ সেপাং ডিপো, ব্লান্তিক, বুকিত জলিল ও পুত্রজায়ায় সাম্প্রতিক অভিযানে আটককৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-সহকারী পরিচালক জোসামি মাস্তান বলেন, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন, তাদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ প্রাণহানি ঘটছে, কেউ ধরা পড়ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে, প্রতারকদের হাতে জিম্মি হচ্ছেন অনেকেই। সহায় সম্বল বেঁচে টাকা দেয়ার পর মুক্তি মিলছে কারো।

এদিকে হাই-কমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব শাহিদা সুলতানার সঙ্গে মঙ্গলবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন্দী শিবিরে যারা আটক রয়েছেন তাদেরকে দ্রুত দেশে পাঠানোর সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দী শিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং সনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহিদা বলেন, কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বন্দীদের নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ শুনে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছে তাদের তালিকা দ্রুত মিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একটি ক্যাম্প থেকে তালিকা দিতে এক থেকে দুই সপ্তাহ বিলম্ব হওয়ায় দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে সমস্যা হয়। আবার ক্যাম্প থেকে তালিকা পাঠানো হলেও ব্যক্তির ফরম থাকে না। পরে ক্যাম্পে যোগাযোগ করে তা নিয়ে আসতে হয়। তারপরও দ্রুত বন্দিদের দেশে পাঠাতে আমরা প্রাণপন চেষ্টা করছি।



মন্তব্য চালু নেই