মালয়েশিয়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অবৈধ বাংলাদেশিরা

মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অবৈধ বাংলাদেশিরা। প্রতিদিনই তাদের তাড়া করছে পুলিশ। বাসায়, অফিসে, কারখানায়, গাড়িতে, মার্কেটে এমনকি বন-জঙ্গলেও দিনরাত চলছে পুলিশি অভিযান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৩৯ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ।

এ দিকে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দিতে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন কেন তাদের গ্রেফতার করছে, এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। ১০ দিন ধরে মালয়েশিয়ায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশি শ্রমিকদের রক্ষায় দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। তাদের ছাড়িয়ে নেয়া কিংবা দেশে ফেরৎ পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটিও এই ইস্যুতে ‘নীরব’। গত ১৫ দিনেও মুখ খোলেননি প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্ধশতাধিক সংগঠনের কেউ। মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা কমিটি থাকলেও তারা ‘অবৈধ’দের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। তাদের দৃষ্টি কেবল ঢাকা-লন্ডন। ইদানিং মালয়েশিয়াতে ভিআইপি সফরও কমে গেছে। এর আগে প্রতি সপ্তাহে মিন্টু রোডের ভিআইপিদের মালয়েশিয়ার বুকিত বিন্তাং ও বিভিন্ন শপিংমলে দেখা গেলেও প্রবাসীদের তোপের মুখে পড়তে পারেন এই শঙ্কায় কেউ ওদিকে পা দিচ্ছেন না।

গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে থাকা ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিরা তাদের এই বিপদে দূতাবাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কর্তারা নীরব রয়েছেন বলে অভিযোগ প্রবাসীদের। ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিরা কী করবেন? তারা কী উপায়ে বৈধতার জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন কিংবা যারা ‘বৈধ’ হবার ‘যোগ্য’ নন তারা কীভাবে ‘পলাতক’ অবস্থায় ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফিরবেন এসব বিষয়ে অন্যসব দেশের দূতাবাসগুলো তাদের নাগরিকদের রক্ষায় মাঠে নামলেও বাংলাদেশ দূতাবাস নীরব ভুমিকা পালন করছে।

এদিকে মালয়েশিয়ায় বৈধ কাগজপত্র না থাকায় গত ১০ দিনে কতজন বাংলাদেশি ‘অবৈধ’ শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে এদের সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

অবৈধ এসব শ্রমিকের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে জানতে চাইলে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম রহমান পারভেজ গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। সেখানে তারা মানবেতর দিনযাপন করছেন। তাদেরকে শিগগির ট্রাভেল পাস দিয়ে বাংলাদেশের ওয়েজ আনার্স ফান্ডের টাকায় দেশে পাঠানোর দাবি জানান তিনি।

অবৈধদের বৈধতার বিষয়ে ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, মালয়েশিয়া সরকার বৈধতার জন্য যে কার্যক্রম শুরু করেছে তা আপাত দৃষ্টিতে স্বস্তির মনে হলেও কার্যত নানান কারণে বেশিরভাগ ‘অবৈধ’ শ্রমিকই বৈধ হতে পারবেন না। তিনি বলেন, অবৈধদের ‘বৈধ’ হতে নিজ নিজ কোম্পানির মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেজন্য মালয়েশিয়ান সরকার নির্ধারিত ১২শ রিংগিত পরিশোধ করতে হবে।

মালয়েশিয়ার সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা সমুদ্র পথে অনুপ্রবেশ করেছেন তারা কেউ বৈধতা পাবেন না। যারা স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে তারপর পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে তারাও বৈধতা পাবেন না। এছাড়া যারা সিক্সপিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং অনলাইন হয়েছে তারা কেউ বৈধতা পাবেন না।

তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিক আছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশি তিন লক্ষাধিক। এই অবৈধদের বেশিরভাগই ওপরের ওই তিন ক্যাটাগরির লোক। মালয়েশিয়ান সরকার যদি সিদ্ধান্ত না বদলায় তাহলে ওরা কেউ ‘বৈধ’ হতে পারবেন না। সব শর্ত পূরণ করার পর অবৈধদের মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি ‘বৈধতা’ পাবে না বলে জানান তিনি।

‘অবৈধ’দের বিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি কী করছে জানতে চাইলে জহুরবারু কমিউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম আমিন বলেন, কমিউনিটিতে অনেক বিশিষ্ট লোকজন থাকলেও তাদের ভূমিকা রহস্যজনক। বরং তারা কেউ কেউ বিপদগ্রস্ত অবৈধ শ্রমিকের কাছ থেকে পারমিটের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিয়ে রাজনৈতিক ব্যানারে কয়েকটি সংগঠন থাকলেও তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। তারা উল্টো শ্রমিকদের নিয়ে ব্যবসা করছে। ‘ধরপাকড়’ হলে তখন ওদের ‘সুসময়’ আসে। পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনা কিংবা পারমিট করে দেয়ার নামে তাদের ব্যাপক বাণিজ্য হয়।

তিনি বলেন, পারমিটের নামে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কিছু দালাল তাদের পারমিট করে দেবে বলে দুই তিন হাজার রিংগিত নেয়। তারপর পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেয়। তিনি প্রতারকদের কাছ থেকে সাবধান হতে প্রবাসীদের অনুরোধ জানান।



মন্তব্য চালু নেই