মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসায় লাগবে না আর রিটার্ন টিকিট

মালয়েশিয়া পড়াশোনা করতে গেলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফিরতি টিকিট করাটা বাধ্যতামূলক। এটা ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্স বোর্ডিংপাস ইস্যু করে না। বিমান বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে ছিল। রীতিমতো নোটিশ দিয়ে ফিরতি টিকিট ছাড়া বোর্ডিংপাস ইস্যু না করার নিয়ম চালু করেছিল সরকারি এয়ারলাইন্সটি। অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোর লিখিত কোনো নিয়ম না থাকলেও ফিরতি টিকিট ছাড়া বোর্ডিংপাস ইস্যু করে না।

তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবার আগের নোটিশ বাতিল করে নতুন করে ঘোষণা দিল, স্টুডেন্ট ভিসায় ওয়ান-ওয়ে টিকিটই যথেষ্ট, রিটার্ন লাগবে না। গত ১২ জুন এ সংক্রান্ত নোটিশটি জারি করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের রিটার্ন টিকিট করার যে বাধ্যবাধকতা রেখে নোটিশ দেয়া হয়েছিল এখন থেকে আর তা কার্যকর হবে না।

২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনে বলা ছিল, কেউ যদি ওয়ার্কিং ভিসায় বিদেশে কর্মের উদ্দেশ্যে যায় তাহলে তার ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স কার্ড লাগবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সরকারি চ্যানেলে যারা ভিসা পেতেন, কেবল তারাই প্রশিক্ষণের পর ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স কার্ড পেতেন। বেসরকারি বা নিজ উদ্যোগে ওয়ার্কিং ভিসা সংগ্রহকারীদের ম্যানপাওয়ার কার্ড দেয়ার নিয়ম ছিল না।

ম্যানপাওয়ার কার্ডের এই বাধ্যবাধকতার কারণে অনেকেই তখন স্টুডেন্ট ভিসায় মালেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করতো। অনেকে কাজ করার উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া গেলেও যাতায়াত সুবিধার্থে স্টুডেন্ট ভিসা ব্যবহার করতো। স্টুডেন্ট ভিসাতে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পেমেন্ট ক্লিয়ারেন্স না থাকলে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন অনেক যাত্রীকে ফেরত দিত। তাই এয়ারলাইন্সগুলো ফিরতি টিকিট বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিল। কিন্তু গতবছর থেকে ওয়ার্কিং ভিসায় সরকারি বেসরকারি সব চ্যানেলের জন্য ম্যানপাওয়ার কার্ড উন্মুক্ত করে দেয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রবণতা এখন নেই বললেই চলে। ফলে স্টুডেন্ট ভিসায় ফেরত আসার মাত্রায় প্রায় শূন্যের কোঠায়। বর্তমানে স্টুডেন্ট ফেরত না এলেও রয়ে গেছে রিটার্ন টিকেটের সেই বাধ্যবাধকতা। এ থেকে এজেন্সি, এয়ারলাইন্স যোগসাজশে অবৈধ মুনাফা করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

2016_06_14_21_14_24_YmwQtaQzV2P79SgviW424Ac1q42CCS_original

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ বলেন, ‘একটা সময় এই কার্ড (ম্যানপাওয়ার) পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার থাকলেও এখন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সহজে ৩ হাজার টাকা জমা দিয়ে এই কার্ড করানো যায়। আর ওয়ার্কিং ভিসা সহজলভ্য হওয়ায় সাধারণত শ্রমিকরা এখন স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ভাবে না।’

কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে মালয়েশিয়া যান তাদের জন্য ফিরতি টিকিট কতটা জরুরি- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা করতে গেলে ফিরতি টিকেটের কোনরূপ প্রয়োজনীয়তা নেই। এটার আইনি ভিত্তিও নেই। এখন মালয়েশিয়া পড়তে গেলে দেশে থেকেই এক সেমিস্টারের টাকা অগ্রীম দিতে হয়। সেমিস্টার ফি দেয়া হলে সেখানকার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসা প্রসেসিং করে দলিলাদি পাঠায়। মালয়েশিয়া পৌঁছুলে শিক্ষার্থীকে বিমানবন্দরে অভর্থ্যনা জানানোর কাজটাও তারা করে। তাই এখন মোটেও ফিরতি টিকিট জরুরি নয়।’

তিনি জানান, এরপরেও যদি কোনো শিক্ষার্থীকে ফেরত আসতে হয় সেক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সগুলোর সুবিধার্থে নিয়ম করা হয়েছে: কোনো শিক্ষার্থী মালয়েশিয়া পড়াশোনা করতে গেলে স্টুডেন্ট ভিসায় বোর্ডিংপাস ইস্যুর সময় যাত্রীর সাথে ভিসা, অফার লেটার, ভিসা অ্যাপ্রোভাল লেটার, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং ন্যূনতম ২৫০ মার্কিন ডলার সমতুল্য পরিমাণ অ্যান্ডোর্স করা ক্যাশ আছে কি না দেখা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থী মালয়েশিয়াতে প্রত্যাখ্যাত হলেও সাথের টাকা দিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারবে।

নতুন এই নিয়মের কথা উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেট, অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশ ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, কোনভাবেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে রিটার্ন টিকেট চাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সার্কুলার দিয়ে এয়ারলাইন্সটির সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোকে হ্যান্ডলিং স্টাফদের ব্রিফ করার জন্য অনুরোধ করেছি। এরপরেও বে-আইনিভাবে কোনো এয়ারলাইন্স রিটার্ন টিকিট চাইলে যথাযথ আইন প্রয়োগ করা হবে।

অন্যদিকে, কোনো ট্রাভেল এজেন্সি স্টুডেন্ট ভিসায় অযথা রিটার্ন টিকিট ইস্যু করলে এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে। তাই স্টুডেন্ট ভিসায় এখন থেকে দরকার হবে না ফিরতি টিকিটের।



মন্তব্য চালু নেই