ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট : ছয় মন্দিরে হামলা ও বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে র‌্যাব-এপিবিএন-বিজিবি মোতায়েন হয়েছে। রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে এক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ব্রাহ্মণবড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা। রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই যুবকের ফাঁসির দাবিতে স্থানীয়রা সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সদস্যরা। এরপরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

পুলিশ জানায়, শত শত লোক দেশিয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাসিরনগর সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমশুদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দিরসহ ৬টি মন্দির ভাংচুর করে। তবে নাসিরনগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আদেশ দেব জানান ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

এ সময় হামলাকারীরা শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। বেশ কয়েকজন পূজারি আহত হয়। তবে থানা পুলিশ এ সময় নির্বিকার ছিল বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। পরে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

rrrrhome

১২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী জানান জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন দেব জানান বিকেলের পর পরিস্থিতি দৃশ্যত শান্ত হলেও সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে বিকেলে জেলা প্রশাসক রেজাওয়ানুর রহমান ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন একটি সুযোগ সন্ধানী মহল সরকারকে বিব্রত করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এ ঘটনার জন্যে জামাত-শিবিরকে দায়ী করে বলেন এ ঘটনার নেপথ্যে যারা তাদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে ৬ জন হামলাকারীদের আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন প্রতিটি ভাংচুরের ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলার প্রস্তুতি চলছে।

জেলা প্রশাসক রেজাওয়ানুর রহমান বলেন এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত করে যারা দোষী হবেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার নাসিরনগর উজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হলে পুলিশ তাকে আটক করে।



মন্তব্য চালু নেই