মিঠুন চক্রবর্তী কোথায়?

‘বাঙালি বাবু’ উপাধিটা তার প্রাণের চেয়ে প্রিয়। তাই বলিউডের আলো ঝলমলে দুনিয়া ছেড়ে টালিগঞ্জের ‘কম বাজেটে’র ছবিতে অভিনয় করতে এসেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য রয়েছে তার পরম এক মমতা। তাই তো কলকাতায় বাংলাদেশ থেকে একবার ফুটবল দল স্থানীয় পর্যায়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতে গেলে, মিঠুন সোজা জানিয়ে দেন তিনি বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের হয়েই ফুটবল খেলেন! গল্পটা মোহামেডান কোচ জসিমউদ্দিন জোসির কাছে শোনা। সেই বাঙালি মিঠুন চক্রবর্তী এখন পশ্চিমবঙ্গে নেই! অনেক অভিমানে জলেভরা দুটো চোখ নিয়ে অন্তরীণ হয়ে আছেন। বাংলায় আসেন না! কিন্তু কেন?

পশ্চিমবঙ্গের নোংরা রাজনীতি মিঠুনকে দারুণভাবে আহত করেছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে পড়ে সম্মান হারিয়েছেন তিনি। হারানো সম্মান ফিরে পেতে সারদার সব টাকা ফেরত দিলেও মিঠুনের মন মানেনি। তাই বাংলায়ও তার মন টিকছে না। অথচ ওই বাংলার জন্য মিঠুন জীবনের অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ সময় মাটি করেছেন। সত্তরের দশকে পুলিশ তাকে বাংলা-ছাড়া করেছিল।

এই মিঠুন সেই মিঠুন যিনি সৌরভের অধিনায়কত্ব রক্ষার জন্য ভারত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। তখন সৌরভের বদলে বিনোদ কাম্বলীকে ভারতীয় দলে নেওয়ার প্রতিবাদে মুম্বাই বসেই গর্জন করেছিলেন! হকচকিয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাধর বালসাহেবও। মিঠুনের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে তাকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মুম্বাইয়ে বসে মারাঠি ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার মতো হঠকারিতা কেন? মিঠুন জানিয়েছিলেন, মারাঠি ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে নয়, বাঙালি ক্রিকেটারের প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তিনি। বাংলা বঞ্চিত হচ্ছে দেখলেই তিনি গর্জন করবেন, বলে এসেছিলেন সোজাসাপটা। মিঠুনের এই আবেগকে সম্মান না দিয়ে পারেননি বালসাহেবও। এই মিঠুন সেই মিঠুন যিনি এক সময় বাঙালি ফৌজ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য টাকা জোগাড় করতেন নানা উপায়ে। উন্নয়নের কাজে, মানুষের ব্যক্তিগত বিপদে মিঠুনকে বহু বার পাশে পেয়েছে এই বাংলা।

সারা জীবন ধরে অপার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। বছরের পর বছর তিনি ছিলেন বলিউডের সর্বোচ্চ করদাতা। নিজের স্বচ্ছতাকেই নিজের আসল স্টারডম বলে মনে করতেন। তার মনে হচ্ছে, সেই বিশ্বাসযোগ্যতায় আজ তুমুল ধাক্কা লেগেছে। আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় ইডি জেরা করেছে মিঠুনকে! তাঁর নামে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সইতে পারেননি মিঠুন। তাই মুম্বাইয়ে নিজের বাংলোয় নিজেকে বন্দী রেখেছেন। বহুবার কাছের লোকদের বলেছেন, বাংলাদেশে যেতে চাই। নিজ বাংলায় যে মিঠুন অপমানিত, সেই মিঠুন কি আরেকটা বাংলায় কোনোদিন আসবেন? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। তবু দুই বাংলার অনেক বাঙালি ‘গুরু’কে ‘গুরু’ হিসেবেই মনে রাখবে। যোজন দূরে থাক না পড়ে নোংরা রাজনীতি!



মন্তব্য চালু নেই