মিডিয়ায় নারীর উপস্থিতি কমে আসছে

গণমাধ্যমের সংবাদে নারীর উপস্থিতি দ্রুত কমে এসেছে। অন্যান্য পেশায় নারীরা অংশগ্রহণ বাড়লেও গত এক দশকে সাংবাদিকতা বিশেষ করে রিপোর্টিয়ে নারীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ১৯৯৫ সালে গণমাধ্যমের খবরে নারীর উপস্থিতি ছিল ১৭ ভাগ যা ২০১০ সালে বৃদ্ধি পায় ২৪ ভাগে। তবে সামগ্রিক প্রতিবেদন ধরে হিসাব করলে এর হার ছিল মাত্র ১৩ ভাগ। বিশ্ব গণমাধ্যম পরিবীক্ষণ প্রকল্প ২০১৫ জাতীয় প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান জেন্ডার ইন মিডিয়া ফোরাম এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি পাঠ করেন এই প্রকল্পের বাংলাদেশ সমন্বয়ক ড. গীতি আরা নাসরীন। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ইউএনউইমেন’র পরামর্শক ফরহানা নাসরীন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেন্ডার ইন মিডিয়া ফোরামের সাধারণ সমন্বয়ক রঞ্জন কর্মকার, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, ইউএনডিপির ফওজিয়া খন্দকার ইভা প্রমুখ।

প্রতিবেদনে বলা হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকার বা প্রশাসনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তবে দেখা গেছে, নারী যখন প্রতিবেদক থাকেন তখন নারীকেন্দ্রিক খবরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। নারী প্রতিবেদকের খবরে নারীর উপস্থিতি থাকে পুরুষ প্রতিবেদকের চেয়ে বেশি। এ হার যথাক্রমে ২৮ ও ২৪ ভাগ। গণমাধ্যমে নারীর ভূমিকা প্রচার করতে হলে এবং নারীর প্রতি অবমাননাকর, নেতিবাচক, সনাতনী প্রতিপালন বন্ধ করতে হলে বর্তমানে গণমাধ্যমে নারীর যে রূপ প্রতিফলিত হচ্ছে তা চিহ্নিত করা দরকার এবং গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের সংবাদে নারীর উপস্থিতি এমনকি আগের দশকের তুলনায় কমে গেছে।নারী সংবাদে উল্লিখিত হন এক-পঞ্চমাংশের কম সময়। সংবাদে উল্লেখিত রাষ্ট্রীয় ও সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত লোকের মধ্যে মাত্র ১১ ভাগ নারী। খবরে উল্লিখিত নারীদের মধ্যে কোনো চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ এমনকি তারকা ও মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশায় কাউকে দেখা যায়নি। নারীরা এখন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। লোক ও সমাজের ভয়ে তারা এখন এসব মেনে নিচ্ছে যা উদ্বেগের বিষয়।

অনুষ্ঠানে ভিজিটিং ফেলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাহিন সুলতানা বলেন, নারীরা এখন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যেভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে তা আমাদের জন্য একটা নতুন ধাপ। এর পিছনে যে আমাদের দেশের যে রীতিনীতি তাও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আগে যেটা ছিল মহিলারা বাইরে যাবে না, যেতে পারবে না। এই প্রথা ব্যবস্থা এখন আর নেই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে মনের পর্দা। কেউ কেউ আবার এই মনের পর্দায় আটকে থাকে।

আমি বাড়িতে থাকলেই যে কেবল পর্দা হবে তা নয়, পর্দা হলো মানুষের মনের ব্যাপার। আগে একটা ব্যাপার ছিল যে একটা পরিবারের প্রধান হবে পুরুষ কিন্তু এখন এর জন্য দুটি আইন হয়েছে। যদি পরিবারের সুবিধা হয় তাতে পরিবারের প্রধান নারী হলেও সমস্যা নেই। আমাদের দেশের তুলনায় বহির্বিশ্বের নারীরা অনেক এগিয়ে। মহিলারা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করে কিন্তু তুলনামূলকভাবে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তারা এখন বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করছে।

সভাপতির বক্তব্যে নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ১৯৭২ সালে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে নারী দিবস পালন করতাম। অনেকটা গোপনে। এবার প্রথমবারের মতো নারী দিবস পালন করবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। শুধু তাই নয়, জাতীয় প্রেসক্লাবও প্রথমবারের মতো পালন করবে এ দিবস। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই আশার বিষয়।



মন্তব্য চালু নেই