মিরপুরের বিহারী ক্যাম্প উচ্ছেদ চলবে না : আদালত

মিরপুর পল্লবী থানাধীন বিহারী ক্যাম্পের জমিতে বসবাসকারী অবাঙালীদের উচ্ছেদে উভয় পক্ষকে স্থিতিয়াবস্থা জারি করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এই আদেশের ফলে বিহারী ক্যাম্প ও আশে-পাশে উচ্ছেদ কাযক্রম চালানো যাবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আদালতে আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ ও অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান খান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এছাড়া মধ্যস্থতাকারী মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্টের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

এর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে চেম্বার জজকোর্টে যান গত ৩০ মার্চ। ওই আবেদন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার জজ আদালত।

গত ২৯ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ চেয়ে বিহারীদের করা ৯টি রিট পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রায়ের ফলে পল্লবী ও মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প এলাকার বাইরে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিহারীদের উচ্ছেদ করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা।

সে সব রিট আবেদনকারীদের মধ্যে মিরপুরের সাদাকাত খান ও সহিদ আলী বাবলু ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। সেই আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত ছয় সপ্তাহের জন্য এই স্থিতাবস্থা জারি করেন। তাই আপাতত ক্যাম্প ও এর আশপাশের অধিবাসীগণ আগের অবস্থানেই থাকবেন।

আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান বলেন, আজ আপিল বিভাগের আদেশে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তার ওপর ছয় সপ্তাহের স্থিতিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আপাতত ক্যাম্পের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাবে না।

মিরপুর পল্লবী থানার আশপাশের জমিতে ১৯৯৫-৯৬ সালে ২২টি প্লট গ্রহীতাদের মাঝে বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ২০০২ সালে পুলিশ সহায়তায় পল্লবীতে কিছু দোকানপাট উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে তাদের প্রতিনিধিরা আদালতে রিট করেন। শুনানি নিয়ে রুল ইস্যু হয় ও উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট।

পরে ২০০৩ সালে ২২টি প্লট বরাদ্দ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়। এসব প্লটে বসবাস করে বলে দাবি করে দখল হস্তান্তরের বিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা চেয়ে অপর একটি রিট করা হয়। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি ও প্লট হস্তান্তরের ওপর স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।

এর আগে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়ও কিছু স্থাপনা ভাঙার উদ্যোগ নিলে ২০০১ সালে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারও একটি রিট দায়ে করে। সেই রিটেও রুল ও স্থগিতাদেশ আসে। অনুরূপভাবে নীলফামারির রেলওয়ের জায়গায় সৈয়দপুর বিহারী ক্যাম্প থেকে যাতে উচ্ছেদ করতে না পারে এজন্য ২০০৭ সালে অপর একটি রিট দায়ের করা হয়। অনুরূপভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিহারীদের উচ্ছেদ নিয়ে আরো ৫টি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। হাইকোর্ট ২৯ মার্চ সবগুলো রিট খারিজ করে দিয়েছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই