মীর কাসেমের ফাঁসি হবে কাশিমপুরে

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হবে কাশিমপুর কারাগারে। কারা কর্মকর্তারা শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন। শনিবার বা রোববারের মধ্যেই ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলেও জানান কারা কর্মকর্তারা।

এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না বলে আজ জানিয়েছেন মীর কাসেম আলী। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার শর্ত দিয়ে তিন দিন আটকে রাখার পর শুক্রবার তিনি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। তাঁর ফাঁসি কার্যকরে এখন আর কোনো বাধা নেই।

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে রাখা হয়েছে মীর কাসেমকে। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর কাশিমপুর কারাগার-২-এর জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ‘দুপুরের খাবারের পর বেলা তিনটার দিকে কনডেম সেলে মীর কাসেমের কাছে তিনিসহ কয়েকজন কারা কর্মকর্তা দেখা করেন। এ সময় তাঁরা জানতে চান মীর কাসেম প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। জবাবে মীর কাসেম বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না।

কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে তাঁর ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকল না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন যেকোনো সময়ে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হতে পারে।

কবে ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে, জানতে চাইলে প্রশান্ত বণিক বলেন, ‘(শুক্রবার) ফাঁসি কার্যকরের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে কারা কর্তৃপক্ষ সব সময়ই প্রস্তুত থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ীই সময়-ক্ষণ ঠিক করা হবে।’

কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, শনিবার রাতে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করার মতো প্রস্তুতি তাঁদের রয়েছে। কাশিমপুর কারাগারেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। মানবতাবিরোধী অন্য আসামিদের মৃত্যুদণ্ড যেভাবে কার্যকর করা হয়েছে, ওই প্রক্রিয়ায় মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে। ফাঁসি কার্যকরের আগে মীর কাসেম আলীর স্বজনেরা তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করার সুযোগ পাবেন। এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষই তাঁদের ডেকে পাঠাবে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনেরা মীর কাসেমের সঙ্গে দেখা করার ডাক পাননি।

কাশিমপুর কারাগার-২-এর কারাধ্যক্ষ (জেলার) নাশির আহমেদ বলেন, কারাগারের ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্দী মীর কাসেম আলী সুস্থ আছেন। কারাগারের চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাঁকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়েছে।

মীর কাসেম আলীর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া বলেন, ‘“নিখোঁজ” ছেলেকে ছাড়া তিনি (মীর কাসেম আলী) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না, এটা আগেই বলেছিলেন। এখন আমরা জেনেছি যে উনি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’

৩০ আগস্ট মীর কাসেমের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রিভিউ আবেদন খারিজের তিন দিনের মাথায় মীর কাসেম জানালেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না।

মীর কাসেম আলীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুটি অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসি ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। চলতি বছরের ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্য ছয়টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে তাঁর কারাদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম। তাঁর আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়। মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের ওপর ২৮ আগস্ট শুনানি শেষ হয়। এরপর ৩০ আগস্ট মীর কাসেমের করা আবেদন খারিজ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ে রিভিউ আবেদনই ছিল শেষ ধাপ। এই আবেদন খারিজ হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার পথ শুধু খোলা ছিল। কারা কর্মকর্তারা জানান, গত বুধবার রাতে রিভিউ আবেদনের রায় কারাগারে পৌঁছানোর পর কারা কর্মকর্তারা মীর কাসেমের কাছে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চিন্তা করার জন্য কিছু সময় চেয়েছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, তাঁকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়া হয়েছে। তবে শুরুতে মীর কাসেম জানিয়েছিলেন, ‘নিখোঁজ’ ছেলের সিদ্ধান্ত ছাড়া তিনি এ বিষয়ে কোনো মতামত দেবেন না। মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন দাবি করেছিলেন, সাদাপোশাকধারী লোকজন তাঁদের ছেলে ব্যারিস্টার আহম্মেদ বিন কাসেমকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। সেই ছেলে তাঁর বাবার আইনজীবীও। পারিবারিক যেকোনো পরামর্শের জন্য তাঁকে প্রয়োজন। ছেলেকে ছাড়া তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না তাঁর স্বামী। পরিবারও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।

মীর কাসেমের ফাঁসি হতে পারে, এ খবরে শুক্রবার বিকেলের পর থেকে কাশিমপুর কারাগারের সামনে উৎসুক জনতা ভিড় করতে শুরু করে। মীর কাসেমের ফাঁসির খবর শুনে টাঙ্গাইলের বাসাইল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়া (৬৫) কাশিমপুর কারাগারে চলে আসেন। তিনি জানান, মীর কাসেমের ফাঁসি কাশিমপুর কারাগারে হচ্ছে শুনে তিনি এখানে এসেছেন। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতির কথা শোনান জমায়েত হওয়া মানুষকে।



মন্তব্য চালু নেই