মুখ থুবড়ে পড়ছে বেসরকারি পাটকল

আর্থিক সংকটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ছে বেসরকারি পাটকলগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এ খাতে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও আমলে নিচ্ছে না তারা। আর এ কারণেই বেসরকারি পাটকলগুলো সফলতার মুখ দেখছে না বলে অভিযোগ করছেন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের  (বিজিএমএ) নেতারা।

এদিকে তফসিলী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমএ) পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। তবে বিজিএমএ নির্দিষ্ট প্রমাণাদি দাখিল করলেও আর্থিক সুবিধা বা ঋণ দেওয়ার নির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি তফসিলি ব্যাংকগুলো।

বিজিএমএর অভিযোগ, সরকারি পাটকলের ন্যায় বেসরকারি পাটকলগুলোকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করছে না তফসিলি ব্যাংক। তবে জানা গেছে, কয়েকটি মিলের আবেদন বিবেচনায় আছে। তবে প্রক্রিয়া মন্থর গতিতে চলছে। ফলে সদস্য মিলগুলো আর্থিক দুরবস্তার কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং কিছু কিছু মিল ইতিমধ্যে বন্ধও হয়েছে।

বিজিএমইএর সচিব আবদুল বারিক খান  বলেন, এ বছর ১২ লাখ বেল (৫.৬ মণে এক বেল) কাঁচা পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও টাকার অভাবে এর ২৫ শতাংশ পাটও কেনা হয়নি। এ ছাড়া বর্তমানে কৃষকের কাছে কোনো পাট নেই। ফলে আমাদের যেতে হবে ফড়িয়াদের কাছে। আর ফড়িয়াদের কাছে পাট কিনতে গেলে বেশি দামে কিনতে হবে। ফলে পাটকলগুলোর লোকসানের আশংকা আরো বেশি।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি পাটকলগুলোকে বাজেট থেকে সরাসরি টাকা দেওয়া হয়। ফলে তারা সময়মতো কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনতে পারছে। দাম কম পড়ায় বিক্রিও করতে পারছে কম দামে। ফলে বিদেশি ক্রেতারা যেখানে কম দামে পাটবস্ত্র পায় সেখানেই যায়।

‘এ ছাড়াও ঋণ মওকুফের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ আছে। সরকারি পাটকলগুলোকে ঋণ মওকুফ করলেও বেসরকারি পাটকলগুলো এর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে এ বছর আমরা লাভের মুখ দেখছি না’, বলেন তিনি।

তিনি জানান, বেসরকারি ১৪১টি পাটকলের মধ্যে ২৫টি বন্ধ হয়ে গেছে এবং এ বছরেই বন্ধ হয়েছে ৮টি। গত বছর আমাদের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন। পাটজাত পণ্য উৎপাদন থাকলেও রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন। বাকিগুলো আমাদের লোকসান। সময়মতো আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় বেসরকারি পাটকলগুলো লোকসানের মুখে পড়ছে বলে জানান তিনি।

তিনি পাটখাত লোকসানে পড়ার অন্য কারণ প্রসঙ্গে বলেন, বাধ্যতামূলক পাটজাত পণ্য ব্যবহার আইন ২০১০ সালে পাশ হলেও আজো বাস্তবায়ন হয়নি। যদি এই আইনটি বাস্তবায়ন হতো তাহলে পাটকল মালিকরা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পেত। এ ছাড়া চালের বস্তায় পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার (গভর্নর সচিব) এএফএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছি। সরকারি পাটকলগুলোর মতো সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বেসরকারি পাটকলগুলোকেও দেওয়া হবে। তাই প্রত্যেকটা তফসিলি ব্যাংক আমাদের নির্দেশ মানতে বাধ্য।’

এদিকে ব্যাংকগুলোতে গিয়ে জানা যায়, সরকারি পাটকলগুলোর ক্ষেত্রে কার্যক্রম যতটা দ্রুত হচ্ছে, বেসরকারিগুলোতে তেমন অগ্রগতি নেই। যে যে ব্যাংকের অধীনে যতগুলো সরকারি পাটকল আছে তাদের ঋণ দেওয়া হয়ে গেছে। কিছু কিছু ব্যাংকে দুয়েকটি পাটকলকে ঋণ দেওয়া হলেও কিছু ব্যাংক বলছে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো পাটকলের মালিক ঋণ নিতে আসেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের শিল্পকারখানা বিভাগের ঋণদান শাখার ডেপুটি ম্যানেজার আব্দুল কাদির খান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী পাটকলের মালিকদের আমরা ঋণ দিচ্ছি। আমাদের অধীনে ২০টি সরকারি-বেসরকারি পাটকল আছে। এর মধ্যে ৭টি বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের ৩১ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। সরকারি মিলগুলোকে তাদের পাওনা মতো ৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়ে গেছে। বেসরকারি মিলকে ১২ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে আরো ৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বাকী ১৩ কোটি টাকা শিপইয়ার্ড অ্যান্ড ব্রিডকে দেওয়া হবে।

এ ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকেরও একই ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসলে আমরা বোর্ডের কাছে পাঠাই। বোর্ড যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে কাকে ঋণ দেওয়া যাবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট পাট খাতে সহায়তার জন্য ৫ বছর মেয়াদে ২০০ কোটি টাকার  পুনঃঅর্থায়ন তহবিল হতে ঋণ সুবিধা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ১৬টি তফসিলি ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে।

এই তহবিলের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক হতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ৫ শতাংশ সুদে পুনঃঅর্থায়ন ঋণ সুবিধা নিতে পারবে। এ ছাড়া রপ্তানি খাতে সংশ্লিষ্ট সব পাটকল, রপ্তানিকারক ও পাট ব্যাবসায়ীরা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হতে এ  ঋণ নিতে পারবে। সরকারি পাটকলের জন্য তহবিলের ৪০ শতাংশ, বেসরকারি পাটকলের জন্য ৪০ শতাংশ এবং রপ্তানিকারক ও পাট ব্যবসায়ীদের জন্য তহবিলের ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

তহবিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বরাদ্দের পরিমাণ ছিল : সোনালী ব্যাংক ৩১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৪৪ কোটি, জনতা ব্যাংক ৪৭ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৪২ কোটি, বেসিক ব্যাংক ৭ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৬ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক ৩ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৩ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৩ কোটি, এবি ব্যাংক ৩ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৩ কোটি, উত্তরা ব্যাংক ২ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ২ কোটি, স্টান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক ২ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ১ কোটি এবং সিটি ব্যাংক ১ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী ১৬টি তফসিলী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী। সূত্র : রাইজিং বিডি



মন্তব্য চালু নেই