মুছা পুলিশের সোর্স হয়ে ওঠার গল্প

এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার সব রহস্য এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের সোর্স মুছাকে ঘিরে। পুলিশের দাবি, মুছাই খুনিদের ভাড়া করে এবং তার নির্দেশেই মিতুকে হত্যা করা হয়। এছাড়া হত্যা মিশনেও অংশ নেয় সে। তাকে ধরতে পারলেই সব রহস্যের সমাধান হবে।

কিন্তু এই মুছা কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে, তা নিয়েই অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে রহস্যময়তা। শুরুতে পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, মুছা পুলিশের কাছেই আটক আছে। কিন্তু পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুছাকে ধরার চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুছাকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। সে ছাড়াও অন্য যে ৫ জনের নাম এসেছে তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে দেশের সব বিমান ও স্থল বন্দরে অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের মধ্যম গাগরা গ্রামে কামরুল ইসলাম ওরফে আবু মুছা সিকদারের বাড়ি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুছা ২০০০ সালে সৌদি আরব যায়। তবে একই বছর আবার দেশে ফিরে আসে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির স্থানীয় ক্যাডারদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্যাডারদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলে।

স্থানীয় গুণ্ডাপাণ্ডাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে হাটহাজারী সার্কেলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহাঙ্গীর মাতুব্বর তাকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। সেখানে এএসপি হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বাবুল আক্তারের সঙ্গেও কাজ করে মুছা।

এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার জসিম বাহিনীর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে মুছার। স্থানীয়রা জানান, এক-এগারোর সময় সেনা

সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুছা অগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। তবে ওই সময় তার নামে থানায় কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি।

২০০৮ সালের পর মুছা চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে। চট্টগ্রামে এহতেশামুল হক ভোলার (মিতুকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার) সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ শুরু করে। সোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে তার সম্পর্কও বজায় ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মিতু হত্যাকাণ্ডের পর রাঙ্গুনিয়ায় মুছার পরিবাদের সদস্য ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মুছার সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ হওয়ার পরপরই তার পরিবারের সদস্য একেবারে হাওয়া হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এই ঘটনায় বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এই হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার গত রবিবার (২৬ জুন) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকা থেকে এহতেশামুল হক ভোলা ও মঙ্গলবার ভোরে মনিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আদালতের বিশেষ সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে খুনিরা বলেছে, হত্যাকাণ্ডে সাতজন অংশ নিয়েছিল। সরাসরি অংশ নেয় মুছা, ওয়াসিম ও নবি। বাকিরা ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে ছিল। তারা হলো- আনোয়ার, রাশেদ, কালু ও শাহজাহান। মুছা মোটরসাইকেলের ধাক্কা দিয়ে মিতুকে ফেলে দেয়। ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে নবি। গুলি চালায় ওয়াসিম ও মুছা।

মিতুকে হত্যার আগে মুছা ছাড়া আর কেউই তার পরিচয় জানতো না বলেও জানিয়েছে গ্রেফতার ব্যক্তিরা।-বাংলা ট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই