মুন্সীগঞ্জে সাত মাসেও অনুমোদন পায়নি বিএনপির দুই উপজেলা কমিটি

নাসরিন আক্তার, মুন্সীগঞ্জ থেকে : মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষপাতিত্বে গত সাতমাসেও অনুমোদন পায়নি মুন্সীগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকার শ্রীনগর ও সিরাজদিখান বিএনপির দুই উপজেলা কমিটি। জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ আবদুল হাইয়ের কাছে ওই দুই উপজেলার কমিটি জমা দেয়ার পর জেলার দুই শীর্ষ নেতা দুইদিকে অবস্থান নেন। জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই পক্ষ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের দেয়া কমিটির। আর সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর মল্লিক রিপন নেন বাদ পড়া কমিটির। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য দুই কমিটিই তাদের মতামত নিয়ে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এদেরমধ্যে জেলার সভাপতি এক পক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক অপর পক্ষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে তাদের পক্ষাবলম্বন করছেন বলে অভিযোগ উছেছে। কমিটি জমা দেয়ার পরপরই জেলার সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শে বাদপড়া নেতারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা কাছে গিয়ে দেখা করেন। অভিযুক্ত করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে। এরপর ঝামেলা হওয়ায় কমিটি অনুমোদন করা থেকে পিছু হটেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই। এ অবস্থায় ওই দুইটি উপজেলা বিএনপির কমিটি ঝুলে রয়েছে। এতে করে উপজেলা দুইটিতে বিএনপির সাংগঠনিক গতি থেমে গেছে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছেন। পুরাতন ও নতুন দুই কমিটির নেতৃবৃন্দ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। দুই পক্ষের বিরোধে গত ২২ শে ও ৩১ শে মার্চ সিরাজদিখান ও শ্রীনগরের ২৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের ব্যাপক ভরাডুবি ঘটে। শ্রীনগরের ১৪টির মধ্যে শ্যামসিদ্ধি ও সিরাজদিখানের ১৪টির মধ্যে শেখরনগর ইউনিয়নে কেবল জয় পায় বিএনপি। শ্রীনগরের কোলাপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মমিন আলী তিন মেয়াদে ও তার ছেলে তৈয়ব আহমেদ মামুন এক মেয়াদে মিলে টানা ২২-২৩ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার এ ইউনিয়নে অচেনা কামরুজ্জামান পলাশ নামে এক যুবককে দলীয় প্রার্থী করা হয়। কিন্তু মমিন আলী তার নিজের ইউনিয়নটিই ধরে রাখতে পারেনি। আবার ষোলঘর ইউনিয়নে মমিন আলীর হস্তক্ষেপে বিএনপির টিকিট দেয়া হয় ইতালি প্রবাসী মো. জুলহাস উদ্দিনকে। অভিযোগ উঠেছে, ওই প্রার্থী ৬০ লাখ টাকার বিনিময়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে পুনরায় ইতালি চলে যান। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজিজুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও নির্বাচনে তৃতীয় ও চতুর্থ সারির নেতাদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। কোন কোন ইউনিয়নে তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী দিতে পারেননি।
গত বছরের ২৪ শে অক্টোবর ঢাকায় বসে কমিটি গঠন করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। একই পথ অনুসরণ করে সিরাজদিখান উপজেলা কমিটি গঠনেও। এরপর জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে এ কমিটি জমা দেয়া হয়। এ কমিটির অনুমোদন আজও দেয়া হয়নি।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির রাজনীতি থেকে সড়ে দাঁড়ালে এরশাদের জাতীয় পার্টি ছেড়ে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বিএনপিতে আসেন। এরপর তিনি মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির হাল ধরেন। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মমিন আলীর সঙ্গে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরোধ দেখা দেয়। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঘিরে হরতাল-অবরোধ আন্দোলনে মমিন আলীর অনুপস্থিতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগে তাকে বাদ রেখেই শ্রীনগর উপজেলা কমিটি গঠন করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাতি শহীদুল ইসলামকে সভাপতি ও যুগ্ন-সম্পাদক আবুল কালাম কাননকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি আংশিক কমিটি গঠন করে তা জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে জমা দেন। একইভাবে সিরাজদিখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ধীরণকে পুনরায় সভাপতি ও কেয়াইন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে কমিটি জমা দেন। এরপর মমিন আলীকে শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির কমিটি থেকে বাদ দেয়ার ঘটনায় কাউন্সিল দাবি করে তৃণমূলের ১৪টি ইউনিয়নের নেতারা।
আবার শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন শ্রীনগরে তার অবস্থান শক্ত করতে তিনি তার ঘরানার নেতাদের দিয়ে উপজেলা কমিটি ঘোষণা দেন। এর ফলে মুলধারা বিএনপির নেতারা বাদ পড়ে যান। আর এতেই বিপত্তি ঘটে। আর এই কমিটির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মমিন আলী। কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান সিনহার নেতৃত্বে শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির ৩০ সদস্যের একটি দল গত বছরের ৮ই ডিসেম্বর রাত ১০ টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে তাদের অভিযোগ জানান। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ শুনে তাদের আশ্বস্ত করে বলে জানা গেছে। এ কারণে শাহ মোয়াজ্জেমের কমিটি আটকে গেছে বলে বাজারে গুঞ্জণ উঠে। কিন্তু ইউপি নির্বাচনের পর মমিন আলীর পক্ষে সেখানকার তৃণমূলের অবস্থান এখন বিপরীতমুখী। অনেকেই এখন মমিন আলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে দলীয় একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন।
এদিকে, ওই উপজেলা কমিটি ঝুলে থাকা, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ও ইউপি নির্বাচনের কারণে জেলা কমিটির সম্মেলনও হচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই