একই সময়ে ফাঁসিতে ঝুললো তিন জঙ্গি

বাংলাদেশে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বুধবার রাত ১০টা ১ মিনিটে তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। মুফতি হান্নান ও বিপুল কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। সেখানেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অপরদিকে রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় আনোয়ার চৌধুরীসহ আরও অনেকে আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।

২০০৭ সালের ৩১ জুলাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে আরেক জঙ্গি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ও মুফতি মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এরপর উচ্চ আদালতে তারা আপিল করলে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এরপর তারা রিভিউ আবেদন করলে সেটাও গত ২২ মার্চ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে সেটাও খারিজ করা হয়। ফলে কারাবিধি অনুযায়ী, তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা ছিল না।

দুই জঙ্গি মুফতি হান্নান ও বিপুলের ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি হিসেবে একের পর এক বুধবার রাতে কারাগারে ঢোকেন ফাঁসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল কবির ৭টা ৪০ মিনিটে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে কারা মহাপরির্দক বিগ্রেডিয়ার সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন। এর আগে সাড়ে ৭টায় ঢোকেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। সন্ধ্যা ৭টা ৩৩ মিনিটে ঢোকেন সিভিল সার্জন সৈয়দ মঞ্জুরুল হক। গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে ঢোকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সও।

এদিকে কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে বুধবার সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করেছেন মুফতি হান্নানের পরিবার সদস্যরা। বুধবার ভোর ৬টার দিকে কারাগারে পৌঁছানোর পর মুফতি হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভীন, দুই মেয়ে নিশাত ও নাজনীন এবং বড় ভাই আলী উজ্জামান সকাল ৭টা ১০ মিনিটে তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পান। তখন থেকে তারা প্রায় ৭টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত হান্নানের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা বেরিয়ে যান।

এদিকে জঙ্গি রিপনের ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢোকেন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল ইসলাম। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় তারা কারাগারে ঢোকেন। এর আগে সন্ধ্যায় সেখানে ঢোকেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ঈমাম মুফতি বেলাল হোসেন। তিনি পৌনে ১০টার দিকে রিপনকে তওবা পড়িয়ে কারাগার থেকে বের হন। এরপর কারাগারে প্রবেশ করেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. অমল রতন সাহা।

রিপনের সঙ্গেও শেষ সাক্ষাৎ করেন স্বজনরা। সাক্ষাত করেন তার বাবা আবু ইউসুফ, মা আজিজুন্নেছা, ভাই নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী।বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে ১টি মাইক্রোবাস ও একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে রিপনের ২১ জন স্বজন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। ৮টা ৪০ মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে যান।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. সগির মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জঙ্গি রিপনের মা, বাবাসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজন তার সাথে দেখা করেন।

তিন জঙ্গির ফাঁসি উপলক্ষে উভয় কারাগারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই