নামাজ পড়লো মুসলিমরা, ঈদগাহ পাহারায় হিন্দুরা

‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন,/ কাণ্ডারী বলো মরিছে মানুষ সন্তান মোর মার…’ , যার চোখে হিন্দু ও মুসলিম একই বৃন্তে দুটো কুসুম, তাকে যারা জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করতে পারে, তারা কি কখনও অন্য ধর্মে বিদ্বেষী হতে পারে? সম্প্রীতির দেশ যে বাংলাদেশ।

তবে দেশকে অস্থিতিশিল করতে কাজ করছে একটি শ্রেণি, যারা মানে না মানবতা। তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে আবার হত্যা করে মুসলিমকেও। সম্প্রতি বেছে বেছে খুন করা হচ্ছে হিন্দু পুরোহিতদের। বাদ যাচ্ছে না সংখ্যালঘু খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ ধর্মগুরুরাও। ‘মুক্তমনা’ ব্লগারদের ধড়মুণ্ড আলাদা করে দিতে হাত কাঁপছে না ইসলামের নামধারী বাংলাদেশি জঙ্গিদের। কিন্তু সংখ্যালঘু বিদ্বেষের এই ছবিই কি বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র?

না, এটা বাংলাদেশের কোনো চিত্র নয়, বাংলাদেশের এক খণ্ড চিত্র দেখা গেছে ঈদের দিন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। যেখানে মুসলমানরা নামাজ পড়ছে, আর ঈদগাহ পাহাড়া দিয়েছে হিন্দু যুবকরা। ওইদিন ভোর ৪টা থেকে ঈদের জামাত চলা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গেছে ওই যুবকরা। অজানা আশঙ্কায় চোখ রেখেছে চারপাশে। খেয়াল রেখেছে নমাজে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে। ধর্মীয় সম্প্রীতির এর চেয়ে সুন্দর নমুনা আর কীই বা হতে পারে! এটাই তো বাংলাদেশ!

জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল শাহী ঈদগাহ ঈদের জামাতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি প্রায় ৪০ জন সেচ্ছাসেবক ছিল। এদের বেশিরভাগই ছিল সনাতন (হিন্দু) ধর্মের অনুসারী! এই স্বেচ্ছাসেবকরা ভোর ৪টা থেকে ঈদের জামাত পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। মুসলিমরা যখন নামাজ পড়ছিল তখন হিন্দু স্বেচ্ছাসেবকরা দাঁড়িয়ে ছিল তাদের নিরাপত্তা দিতে।

শ্রীমঙ্গল শাহী ঈদগাহ কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ এমপি। ঈদের আগেই তিনি ১০ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। এই কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন ৩নং শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়। তার নেতৃত্বেই হিন্দুরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

ঝলক দত্ত নামে একজন বলেন, ‘সারাদেশে আমরা যদি এভাবে একজনের উৎসবে আরেকজন সহযোগিতা করি তাহলে আমাদের মধ্যে কোনো হিংসা বিভেদ থাকবে না। আমরা সবাই মানুষ।’

তারই এক বন্ধু তারেক বলেন, ‘ঈদের জামাতে গিয়ে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল অনেক। নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি অসংখ্য সেচ্ছাসেবক ছিল, যাদের অনেকেই আমাদের এলাকার ছোটভাই। এদের অনেকেই ছিল সনাতন ধর্মের অনুসারী।’

ওই দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কী অসাধারণ সুন্দর আমাদের পরিবেশ। আমরা নামাজ পড়লাম আর তারা দাঁড়িয়ে থাকলো আমাদের নিরাপত্তার জন্য! এর চেয়ে সুন্দর আর কী বা হতে পারে?’

তারেক বলেন, ‘সারাদেশে যখন একের পর এক পুরোহিতদের হত্যা করা হচ্ছে, তখন আমরা আমাদের এই ভাইদের সাহায্যে কি এগিয়ে এসেছি? আজ সংখ্যাগুরু মুসলিমরাই যখন আক্রান্ত তখন এই সংখ্যালঘু যুবকরা ঠিকই এগিয়ে এসেছে! স্যালুট ভাইয়েরা।’



মন্তব্য চালু নেই