মুসলিম বহুবিবাহ নিয়ে হিন্দু বিচারপতির যুগান্তকারী রায়

কোরআনে বর্ণিত বহুবিবাহ সম্পর্কিত আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে অনেক মুসলিম তাদের একাধিক বিয়েকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন। ভারতের গুজরাট রাজ্যের হাইকোর্ট একটি মামলার রায় ঘোষণার সময় এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

রাজধানী আহমেদাবাদে বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করায় জাফর আব্বাস নামের এক লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার প্রথম স্ত্রী। উচ্চ আদালতে মামলা লড়ার সময় স্বামীটি কোরআনের বহু বিবাহের অনুমতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে আদালত থেকে খুব শক্ত জবাব দেন।

গত বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির সময় আদালত বলেন, কোরআন কখনোই বলেনি যে একজন মুসলমান তার স্ত্রীর সঙ্গে নিষ্ঠুর এবং অন্যায় আচরণ করতে পারবে বা প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ব্যাতিত দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে।

আদালত আরো বলেন, “কিছু ‘ধান্দাবাজ’ মুসলিম একের অধিক বিয়ে করার অজুহাতে পবিত্র কোরআনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে।”

বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এই মামলার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘একটা সময় কোরআন যখন বহুবিবাহের অনুমতি দিয়েছিল তার পেছনে ন্যায়সঙ্গত কারণ ছিল। এখন যখন মানুষ কোরআনের এই পূর্বশর্তগুলো ব্যবহার করে তখন সেটা তারা করে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য।’

শুনানিতে স্ত্রী সাজিদা বলেন, তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ কারণ ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধি বহুবিবাহ সমর্থন করে না।

প্রথমে নিম্ন আদালতে রায় স্ত্রীর পক্ষে যাওয়ায় জাফর আব্বাস উচ্চ আদালতে আপিল করেন এই কারণ দেখিয়ে যে, মুসলমানদের নিজস্ব নিয়মে তারা চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পারে।

আদালত এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বহুবিবাহের কথা কোরআনে মাত্র এক জায়গায় বলা আছে, তাও সেখানে শর্ত প্রযোজ্য করে দেয়া আছে।’

বিচারপতি বলেছেন, ‘কিছু মুসলমান পুরুষ আমাদের নবীজির পবিত্র বাণী এবং তার মাধ্যমে অবতীর্ণ হওয়া পবিত্র কোরআনকে ভুলভাবে ব্যাখা করে তাদের নিজস্ব কু-ইচ্ছা পূরণ করছে। কোরআন কখনোই বলে না যে পুরুষ তার স্ত্রীর প্রতি কোনো রকম অন্যায় করতে পারবে, তার অনুমতি ছাড়া আবার বিয়ে করতে পারবে।’

বিচারপতি আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে মানুষ দেওয়ানি দণ্ডবিধি ঠিক মতো স্মরণ এবং মেনে চলবে। আধুনিক চিন্তাশীল সমাজের জন্য এইসব বিধি আর এড়িয়ে চলা উচিৎ নয়।’

বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এই মামলা চলাকালে অনেক ধর্মীয় এবং আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করেন, তারপর এই রায় দেন।



মন্তব্য চালু নেই