মৃগীরোগ হলে কী করবেন

মৃগীরোগ হলো মস্তিষ্কের রোগ। এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ গ্রিক শব্দ এপিলেপ্সিয়া থেকে এসেছে। এপিলেপ্সি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং এ রোগে বারবার খিঁচুনি দেখা দেয়। মানুষের মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে মৃগীরোগ দেখা দেয়।

মানুষের মস্তিষ্কে অল্প সময়ের জন্য অধিকমাত্রায় বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক পরিবর্তন হওয়াই এর মূল কারণ। কেউ কেউ একে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক গোলযোগ বলে থাকেন। বাংলায় একে তড়কা বা সন্ন্যাস রোগও বলা হয়।

চিকিৎসকের মতে, ব্রেইন টিউমার, মাথায় আঘাত লাগা, মস্তিষ্কে বা তা ঝিল্লিতে প্রদাহ, স্ট্রোক, ইনফেকশন (মেনিনজাইটিস, অ্যানকেফালাইটিস), শরীরে লবণের তারতম্যের কারণে রোগটি দেখা দিতে পারে। তবে মানুষিক চাপ, ক্লান্তি ঘুমের সমস্যা অতিরিক্ত মদ্যপান, ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবন না করাসহ কিছু কারণে এ রোগে খিঁচুনি হয়ে থাকে।

আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শরীরে জোরে জোরে ঝাকুনি, বাচ্চার চোখ উল্টে যাওয়া, শরীর দোলানো, জোরে কাঁদা ইত্যাদি ঘটার মাধ্যমে মৃগীরোগের আক্রমণের সূত্রপাত হয়। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সময় বাচ্চা অজ্ঞান হয়ে যায়। মাথায় ও শরীরে আঘাত লাগা, তারপর জিহ্বায় কামড় লাগতে পারে।

গবেষকদের মতে, মৃগীরোগীদের ‘মৃগী ব্যক্তিত্ব’ বা ‘ইপিলেপ্টিক পাসোর্নালিটি’ নামে অভিহিত করা হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ঝগড়া প্রবণতা থাকে, অস্বাভাবিক আত্মকেন্দ্রিক ও খিটখিটে তিরিক্ষি মেজাজের হয়ে থাকেন।

এছাড়া যেসব রোগী দীর্ঘদিন থেকে মৃগীরোগে ভুগছেন তাদের ২০ শতাংশের মধ্যে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি, স্বেচ্ছায় প্রণোদিতভাবে নিজের ক্ষতিসাধন, বিষণ্নতা, আবেগ মনবৃত্তি, সিজোফেন্সনিয়ায় ও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গেছে।

সাবধানতা

মৃগীরোগিদের সবসময় সাবধান থাকা উচিত। বিশেষ করে আগুনের কাছে যাবেন না। ছাদে উঠবেন না। বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করবেন না। একা রাস্তা পার হবেন না। পুকুর বা নদীতে গোসল করা থেকে দূরে থাকবেন। বিপজ্জনক কোনো যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করবেন না। এ রোগে পেশাগত কাজে কোনো বাধা না থাকলেও গাড়ি চালানো ঠিক নয়।

অতিমাত্রায় টিভি দেখা বা কম্পিউটার ব্যবহার করা ক্ষতি করতে পারে (টেলিভিশন বা কম্পিউটারের মনিটরের কম্পমান আলো ইপিলেপ্সির সৃষ্টি করতে পারে)। অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে খিঁচুনি হতে পারে। উচ্চশব্দ ও গরম পানিতে গোসলের কারণে খিঁচুনি হতে পারে।

চিকিৎসা

এ রোগের চিকিৎসায় কমপক্ষে তিন বছর একটানা ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তিন-চার মাস ওষুধ ব্যবহারের পর রোগী ও তার আত্মীয়রা মনে করে রোগ সেরে গেছে এবং ওষুধ বন্ধ করে দেন। এভাবে ওষুধ বন্ধ করার ফলে খিঁচুনি আবারও ফিরে আসে। নতুন করে তৈরি হওয়া এ খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করা প্রায়ই অসম্ভব হয়ে যায়।

মৃগীরোগ চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ওষুধ পাওয়া গেলেও সব ওষুধেরই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। ফলে চিকিৎসা চলাকালে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।যথাযথ চিকিৎসা না করালে জটিলতা আরও বাড়তে পারে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে খিঁচুনি ওষুধে নিয়ন্ত্রণ হয় না। তখন মস্তিষ্কে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। আধুনিক সময়ে ডিবিএস নামক যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশনে বেশ সফলতা পাওয়া যায়।



মন্তব্য চালু নেই