মৃত ঘোষণার ১৫ দিন পর বগুড়ার সেই চেয়ারম্যানের মৃত্যু

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তারাজুল ইসলাম (৩৮) গুলিবিদ্ধ হন গত ৯ জুলাই শনিবার ভোররাতে।

এরপর বিকেলে তার নিকটাত্মীয় ও রাজনৈতিক সহকর্মীসহ একাধিক ব্যক্তি নিশ্চিত হয়ে বক্তব্য দেন তারাজুল মারা গেছেন। তার মৃত্যুর খবর ওই দিনই দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

অথচ ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত ২৪ জুলাই রাত ১০টায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাজিদ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তারাজুলের মৃত্যু নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের দেখা দিলেও সেগুলোর জবাব মেলেনি। কেন তারাজুলকে আগেই মৃত বলা হয়েছিলো। কেন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মতো ব্যয়বহুল যানে দেশের বড় হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরও অপারেশন করা হলো না। কেন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নেয়া হলো না। কেন আলোচিত এই ঘটনাটি তদন্তে পুলিশ জোরদার কোনো অ্যাকশন নিলো না। এসব প্রশ্ন থেকেই যায়।

নিহত তারাজুলের সহযোদ্ধা সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান শফিক জানান, তারাজুলকে গুলি করা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। আর যেসব কারণে তারাজুল হত্যাকারীদের টার্গেটে পরিণত হতে পারে সম্ভাব্য সেইসব কারণও পুলিশকে অবগত করা হয়েছিলো। কিন্তু তাদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

গত ৯ জুলাই শনিবার ভোররাতে গাবতলী উপজেলার আটবাড়িয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে শোবার ঘরে গুলিবিদ্ধ হন তারাজুল। প্রথমে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে সিরাজগঞ্জ খাজা এনায়েত মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে রাখার পরদিন রোববার সন্ধ্যায় তাকে বগুড়ার ফাতেমা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তার মাথায় অপারেশন করে একটি গুলি বের করা হয়। এরপর থেকেই তিনি ওই ক্লিনিকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

বগুড়া শজিমেকের সহকারী অধ্যাপক, ব্রেইন ও মেরুদণ্ড সার্জন ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শনিবার দুপুর থেকেই তারাজুলের অবস্থার অবনতি ঘটে। রাত ৯টার দিকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। পরে মেডিকেলের চিকিৎসকের ঘোষণার পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল রাজি জুয়েল জানান, রোববার দুপুরে বগুড়া আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে মরহুমের জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি গাবতলী সোনারায় ইউনিয়নের আটবারিয়ায় তার মরদেহ দাফন করা হয়।

তারাজুল বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে গাবতলীর সোনারায় ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে বগুড়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান তারাজুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার চারদিন পর ১২ জুলাই তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু শাপলা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার বর্ণনায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাবতলী মডেল থানা পুলিশের ওসি শাহিদ মাহমুদ খান জানান, এখন হত্যা প্রচেষ্টা মামলাটি সংশোধিত হয়ে হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তর হবে।



মন্তব্য চালু নেই