মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর নিয়ম-পদ্ধতি

মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানো ওয়াজিব। আর তা হবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে। যাবতীয় ঋণ, অসিয়ত এবং মীরাস বন্টনের আগে কাফনের খরচ তার সম্পত্তি থেকে গ্রহণ করতে হবে। মৃতের সম্পত্তি থেকে যদি কাফনের খরচ না হয় তবে তার পিতা বা ছেলে বা দাদার ওপর দায়িত্ব বর্তাবে।

ক- মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানো ওয়াজিব। আর তা হবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে। যাবতীয় ঋণ, অসিয়ত এবং মীরাস বন্টনের আগে কাফনের খরচ তার সম্পত্তি থেকে গ্রহণ করতে হবে। মৃতের সম্পত্তি থেকে যদি কাফনের খরচ না হয় তবে তার পিতা বা ছেলে বা দাদার ওপর দায়িত্ব বর্তাবে। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায় তবে বায়তুল মাল থেকে প্রদান করবে। তাও যদি না পাওয়া যায় তবে যে কোনো মুসলিম প্রদান করতে পারে।
খাব্বাব ইবন আরাত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَبِيلِ اللهِ، نَبْتَغِي وَجْهَ اللهِ، فَوَجَبَ أَجْرُنَا عَلَى اللهِ، فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْكُلْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا، مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ، قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ، فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ شَيْءٌ يُكَفَّنُ فِيهِ إِلَّا نَمِرَةٌ، فَكُنَّا إِذَا وَضَعْنَاهَا عَلَى رَأْسِهِ، خَرَجَتْ رِجْلَاهُ، وَإِذَا وَضَعْنَاهَا عَلَى رِجْلَيْهِ، خَرَجَ رَأْسُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ضَعُوهَا مِمَّا يَلِي رَأْسَهُ، وَاجْعَلُوا عَلَى رِجْلَيْهِ الْإِذْخِرَ»، وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ، فَهْوَ يَهْدِبُهَا

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হিজরত করলাম। অতএব, আল্লাহর কাছে আমদের পুরস্কার পাওয়াটা অনিবার্য হয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এভাবে দুনিয়া থেকে চলে গেলেন যে তার পুরস্কারের কোনো কিছুই তিনি ভোগ করেন নি। মূস‘আব ইবন ‘উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের অন্যতম। তিনি উহুদ যুদ্ধের সময়ে শাহাদাত বরণ করেন। তাকে কাফন দেওয়ার মতো একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নি। আমরা যখন তা দিয়ে তার মাথা ঢাকলাম তার পা বেরিয়ে আসল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা চাদরটা এভাবে পরাও যাতে তা মাথা জড়িয়ে থাকে আর তার পা ‘ইযখির’ (একপ্রকার ঘাস) নামক ঘাস দিয়ে ঢেকে দাও। আর আমাদের মধ্যে কারো কারো ফল পেকে গেছে, যা তারা আহরণ করেছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪০।]

খ- পুরুষকে তিনটি লেফাফা বা কাপড়ে কাফন পরানো মুস্তাহাব। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুতী সাদা তিনটি কাপড়েই কাফন দেওয়া হয়েছিল। কাফনের কাপড়ে সুগন্ধি মিশ্রিত করা মুস্তাহাব। প্রথমে সাতটি ফিতা বিছিয়ে দিবে। তারপর (ফিতাগুলোর উপর) কাপড় তিনটি একটির উপর অন্যটি বিছাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُفِّنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ثَلَاثَةِ أَثْوَابٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ، مِنْ كُرْسُفٍ، لَيْسَ فِيهَا قَمِيصٌ، وَلَا عِمَامَةٌ، أَمَّا الْحُلَّةُ، فَإِنَّمَا شُبِّهَ عَلَى النَّاسِ فِيهَا، أَنَّهَا اشْتُرِيَتْ لَهُ لِيُكَفَّنَ فِيهَا، فَتُرِكَتِ الْحُلَّةُ، وَكُفِّنَ فِي ثَلَاثَةِ أَثْوَابٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ» فَأَخَذَهَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ، فَقَالَ: لَأَحْبِسَنَّهَا حَتَّى أُكَفِّنَ فِيهَا نَفْسِي، ثُمَّ قَالَ: لَوْ رَضِيَهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِنَبِيِّهِ لَكَفَّنَهُ فِيهَا، فَبَاعَهَا وَتَصَدَّقَ بِثَمَنِهَا»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (সিরিয়ার) সাহুল নগরীর সাদা তিন কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়। তন্মধ্যে জামা ও পাগড়ি ছিল না। (তাঁর নিকট সংরক্ষিত) ‘জোড়া কাপড়’ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দ্বিধা- দ্বন্দ্ব ছিল যে তা কাফনের উদ্দেশ্যে খরিদ করা হয়েছিল কিনা? তাই তা রেখে দেওয়া হল এবং সাহুল নগরীর সাদা তিন কাপরেই কাফন দেওয়া হল। এদিকে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জোড়াটা নিয়ে বললেন, আমি অবশ্যই তা সংরক্ষণ করব এবং আমি নিজেকে এর দ্বারা কাফন দিব। তিনি পুনরায় বললেন আল্লাহ তাআলা যদি এটা তাঁর নবীর জন্য পছন্দ করতেন, তবে তিনি অবশ্যই তা দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করতেন। অতঃপর তিনি তা বিক্রি করেন ও তার মূল্য তিনি সদকা করে দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪১।]

গ- মহিলাকে পাঁচটি কাপড়ে কাফন দিবে। লুঙ্গি যা নিচের দিকে থাকবে, খেমার বা ওড়না যা দিয়ে মাথা ঢাঁকবে, কামীছ (জামা) এবং দু’টি বড় লেফাফা বা কাপড়। (অবশ্য তিন কাপড়েও তাকে কাফন দেওয়া জায়েয)।

মূল– আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
গ্রন্থনা– মাওলানা মিরাজ রহমান
সম্পাদনা– ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সৌজন্যে : ইসলামহাউজ



মন্তব্য চালু নেই