মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার কোথায়?

আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের এক মাস পেরিয়ে গেছে। অভিযানের আগে আস্তানা থেকে এক শিশু কন্যাকে নিয়ে পালিয়ে যায় জেবুন্নাহার ইসলাম নামে এক নারী জঙ্গি। কিন্তু এই এক মাসেও খোঁজ মেলেনি তার। পুলিশ তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি। তাকে গ্রেফতার করতে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা। জেবুন্নাহার নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী। স্বামীর হাত ধরে সেও জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সে নব্য জেএমবির মহিলা শাখার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতো।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জেবুন্নাহারকে ধরতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সোর্সের মাধ্যমে তাদের সর্বশেষ অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। জেবুন্নাহারসহ অন্যদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চলছে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরের ২০৯/৫ পিলখানা রোডের পাঁচ তলা একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। অভিযানের পর ওই বাসা থেকে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ও আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী ওরফে আবু করিমের লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় তিন নারী জঙ্গিসহ তানভীর কাদেরীর ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর ছেলেকেও। জেবুন্নাহারও ওই বাসাতেই ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে তিন নারী ও করিমের কিশোর ছেলে জানিয়েছে। এছাড়া, ওই বাসা থেকে জেবুন্নাহারের ব্যাংক সংক্রান্ত কাগজপত্র ও পাসপোর্টও উদ্ধার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম কমকর্তারা।

সিটির একটি সূত্র জানায়, জেবুন্নাহারের পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তার স্বামীর নাম মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। বাবার নাম মমিনুল হক মজুমদার। মায়ের নাম জোহরা আকতার চৌধুরী। স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ধোনাইতরী।২০১৪ সালের ৩১ মার্চ ইস্যু হওয়া ওই পাসপোর্টে জেবুন্নাহারের জন্ম তারিখ উল্লেখ রয়েছে, ১৯৮২ সালের ১৫ আগস্ট। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর হলো- ১৯১৬৭৯০১৩২৯১৪।

সিটি কর্মকর্তারা বলছেন, জেবুন্নাহার অনেক ধূর্ত। অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেয়ে সে পালিয়ে গেছে। সে জঙ্গিদের নতুন কোনও আস্তানায় আত্মগোপন করে রয়েছে বলে তাদের ধারণা। তাকে ধরতে রাজধানী ঢাকার ভেতরে ও বাইরে একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়েছে সিটির একাধিক টিম। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। সিটি সূত্র জানায়, তাদের ধারণা জেবুন্নাহার নব্য জেএমবির কোনও একটি আস্তানায় তাদের সহযোগীদের সঙ্গে রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরায় থাকতে জাহিদুলের সঙ্গে মঈনুল ওরফে মুসা নামে যে জঙ্গি তাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো, সেই মুসার সঙ্গে অবস্থান করছে সে। তাদের সঙ্গে তানভীর কাদেরীর আরেক সন্তান আফিফ কাদেরী ওরফে আদরও রয়েছে বলে ধারণা পুলিশ কর্মকর্তাদের।

সিটি সূত্র জানায়, জেবুন্নাহার ইসলাম বছর দুয়েক আগে স্বামী জাহিদের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তারা দুই সন্তান নিয়ে আগে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে থাকতো। পরে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে কথিত হিজরতে বের হয়। এরপর সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেছে। সর্বশেষ রূপনগরের ৩৩ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাসায় অবস্থান করছিল। কিন্তু গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী মারা যায়। ওই দিনই স্বামীর সঙ্গে রূপনগরের বাসা ছেড়ে আজিমপুরে তানভীর কাদেরীর বাসায় গিয়ে ওঠে জাহিদ-জেবুন্নাহার দম্পতি। তবে ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাহিদ নিজ বাসায় ফিরলে পুলিশ সেখানে হানা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে মৃত্যু হয় জাহিদের।



মন্তব্য চালু নেই