মেয়েদের কখন, কিভাবে অতিরিক্ত সাদাস্রাব হয়? দেখুন ভিডিওতে…

এক্সেসিভ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা অতিরিক্ত সাদাস্রাব যাওয়া নারী শরীরের একটি প্রচলিত সমস্যা। একে লিউকোরিয়াও বলা হয়।

প্রশ্ন: এক্সেসিভ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বলতে আমরা কী বুঝি।

উত্তর: সাধারণত প্রতিটি নারীরই ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ রয়েছে। এটা শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। একে শুদ্ধ বাংলায় সাদাস্রাব বলে থাকি। সাধারণত কিছু গ্রন্থি ও জরায়ু থেকে এই ডিসচার্জটি আসে। এটা সাধারণত কোনো ক্ষতি করে না। কাপড়চোপড়ও নষ্ট করে না। তবে অতিরিক্ত ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ যখন হয়, তখন একে আমরা লিউকোরিয়া বলি। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হয়ে এটি হতে পারে। জরায়ুমুখের ক্যানসার, পলিপ ইত্যাদির কারণেও অনেক সময় এটি হয়ে থাকে।

প্রশ্ন : কী কী কারণে সাদাস্রাব মাত্রাতিরিক্ত হয়।

উত্তর : সংক্রমণ যদি হয়, তাহলে এমন হতে পারে। গনোরিয়া, যৌন সংক্রমিত রোগ ইত্যাদির কারণে আমাদের দেশে এই সমস্যাটি হয়।

প্রশ্ন: বিশেষ কোনো বয়সের মেয়েদের কি এটি হয়? না কি সব বয়সেই হতে পারে?

উত্তর : আসলে যেসব মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী বেশি মেলামেশা করে তাদের এই সমস্যা হতে পারে। আবার মেলামেশা না করলেও হতে পারে। এমনকি কোনো নারীর যদি কাপড় সংক্রমিত থাকে, সেটি যদি অন্য কোনো নারী পরে সেই থেকেও সংক্রমণ হতে পারে।

প্রশ্ন: অতিরিক্ত সাদাস্রাবের লক্ষণ কী?

উত্তর: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত সাদাস্রাব হতে পারে। ঋতুস্রাবের আগে, ডিম্বাণু যখন বের হয় তখন হতে পারে। এটা শারীরবৃত্তীয় বিষয়।

যখন এই সমস্যা হয়, তখন বেশি চুলকানি হয়। কাপড়চোপড় নষ্ট হবে। একটি হলো দইয়ের মতো সাদা ডিসচার্জ হয়, আরেকটি হলো চুনের মতো ডিসচার্জ হয়। এ দুটো হলো প্যাথলজিক্যাল। যাদের ইনফেকশন আছে তাদের এ রকম হবে।

এ ছাড়া জরায়ুমুখের পলিপ, জরায়ুমুখের ক্যানসার, জরায়ুমুখের ইরোশন ইত্যাদির কারণে হতে পারে। জরায়ুমুখের ক্যানসারের বেলায় জরায়ু ফেলে দিতে হয়।

প্রশ্ন: কী কারণে সমস্যাটি হচ্ছে তা কীভাবে বোঝেন।

উত্তর : আমরা সাধারণত ভ্যাজাইনাল সোয়াব পরীক্ষা করি এবং কালচার সেনসিভিটি দিই। এগুলো করে আমরা নিশ্চিত হই যে কী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দিয়ে সমস্যাটি হচ্ছে।

প্রশ্ন: চিকিৎসা তাহলে কিসের ওপর নির্ভর করছে?

উত্তর: কিছু পরীক্ষা করলে আমরা বুঝি এটা তো ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন, অথবা মেট্রোনিডাজল ইনফেকশন। ট্রাইকোমোনাস ইনফেকশনে পরীক্ষা করলে দেয়ালের মধ্যে লাল ছোপ দেখা যাবে।

অন্য ইনফেকশনে পরীক্ষা করে ছোপ ছোপ দেখা যাবে না। দইয়ের মতো দাগ দেখা যাবে। তখন আমরা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্য ওষুধ ব্যবহার করতেও দিই, খাওয়াতেও দিই।

প্রশ্ন: পলিপ ইরোশন বা ক্যানসার এই ক্ষেত্রেও কি রঙের কোনো তারতম্য ঘটে?

উত্তর: যদি পলিপ বা জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়, তখন দুর্গন্ধযুক্ত ডিসচার্জ হয়।

প্রশ্ন: কী ধরনের সমস্যা নিয়ে তখন তারা আসে?

উত্তর: এই সমস্যায় কখনো কখনো রক্তপাতও হয়। সহবাসে সমস্যা হতে পারে। সে ওই সময় ব্যথা বোধ করে।

প্রশ্ন: চিকিৎসা কোন কোন ক্ষেত্রে কীভাবে দিয়ে থাকেন।

উত্তর: যদি মেট্রোনিডাজল হয় তাহলে তো চিকিৎসা দিই। যদি মনে করি জরায়ুমুখের পলিপ, জরায়ুমুখের ক্যানসার, জরায়ুমুখের ইরোশন, তাহলে অন্য চিকিৎসা।

জরায়ুমুখের ইরোশন হলে ক্রায়াকোটারি করি আমরা। একটি যন্ত্রের মাধ্যমে নাইট্রাস অক্সাইড দিয়ে ওই জায়গায় ধরে বরফ দিয়ে সেঁকে দিই।

প্রশ্ন: শুরুর দিকে আপনি যে সংক্রমণের কথা বললেন সেটির যদি চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে কি ইরোশন, পলিপ বা ক্যানসারের দিকে জটিলতা যেতে পারে?

উত্তর : সংক্রমণের জন্য যদি চিকিৎসা না হয়, সাদাস্রাব থাকতে থাকতে জরায়ুমুখে ইরোশন তৈরি করতে পারে। জরায়ুমুখের ইরোশন, জরায়ুমুখের ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

প্রশ্ন : ক্রায়োটা সম্বন্ধে যদি একটু বলতেন।

উত্তর : জরায়ুমুখের ইরোশন হলে আমরা ক্রায়োকটারি করে দিই। এরপর অ্যান্টিবায়োটিক দিই।

প্রশ্ন : এই চিকিৎসা করতে কতক্ষণ লাগে?

উত্তর : বেশি দিন নয়। এক সপ্তাহ চিকিৎসা দিলে ঠিক হয়ে যাবে। একবার যদি ক্রায়োকটারি করে দিই, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিই।

জরায়ুমুখের পলিপ যদি হয়, রোগী যদি তরুণ থাকে, তখন তাকে পলিপ্যাকটোমি করে দিই। তার পারিবারিক জীবনের প্রয়োজন আছে। আর যদি মনে করি তার পরিবার পূর্ণ, বয়স ৩৫ এর ওপরে—তখন আমরা তাকে পরামর্শ দিই হিস্টেকটোমির জন্য, অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়ার জন্য। কারণ, এই পলিপ আবার হতে পারে।

আর জরায়ুমুখের ক্যানসার যদি হয়, তখন আমরা প্যাপসমেয়ার পরীক্ষা দিই। বায়োপসি করি। নিশ্চিত যখন হই এটি জরায়ুমুখের ক্যানসার, তখন একে হিস্টেকটোমি করে ফেলে দিই। নয়তো পরে এটা হতে পারে।

প্রশ্ন : চিকিৎসার পর আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?

উত্তর: আসলে সংক্রমণ আবার হতে পারে। আর যদি জরায়ুমুখের ইরোশন, ক্যানসার ও পলিপ হয়, এগুলোর চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।

প্রশ্ন: এই জাতীয় সমস্যা যাতে না হয় এজন্য প্রতিরোধের উপায় একটু বলুন।

উত্তর: আসলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যদি ভালোভাবে মানা হয়, তাহলে হওয়ার আশঙ্কা খুব কম।

সূত্র: এনটিভি



মন্তব্য চালু নেই