মোটা হওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো জানেন তো?

গত দশ বছরে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা শব্দ দুটি অনেক বেশি শোনা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর মতে, আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ (৩৪.৯% বা ৭৮.৬ মিলিয়ন)পূর্ণবয়স্ক মানুষ স্থূল। যখন প্রতিদিন অনেক ক্যালোরি গ্রহণ করা হয় তখন ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যক্রমের দ্বারা কিছু ক্যালরি খরচ হয় আর অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে জমা হতে থাকে, যার ফলে মানুষ মোটা হয়। বডি মাস ইনডেক্স (BMI)৩০ বা তার বেশি হলে তাকে স্থূলতা বলে। BMI নির্ণয় করা হয় একজন মানুষের ওজন ও উচ্চতা দিয়ে।

স্থূলতার কারণ হচ্ছে – অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, কম ঘুম, অসক্রিয় জীবনধারা, জন্মগত, বয়স, প্রেগনেন্সি ও হরমোনের পরিবর্তন ইত্যাদি। এছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণেও মানুষ মোটা হতে পারে যেমন- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এবং হাইপোথাইরয়ডিজম।

আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের উপর মারাত্তক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে স্থূলতা। অনেক ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে এই স্থূলতা। অধিক ওজন বা স্থূলতার স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জেনে নেই আসুন।

১। টাইপ ২ ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস এক ধরণের বিপাকীয় ব্যধি যার ফলে রক্তের গ্লুকোজ স্তর ঠিক রাখার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন হয়না বা ঠিক ভাবে কাজ করতে পারেনা। স্থূলতা মানুষের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ২০১৫ সালে নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় যে, স্থূলতা প্রদাহ সৃষ্টি করে যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়। প্রদাহ সৃষ্টিকারী অনু LTB4 ইনসুলিন প্রতিহত করে। স্থূলতা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, আর এই বিপাকীয় অবস্থা অকাল মৃত্যু, করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ ও অন্ধত্বের প্রধান কারণ। তাই টাইপ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রোধে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন, সুষম খাদ্য খান, পর্যাপ্ত ঘুমান ও ব্যয়াম করুন।

২। উচ্চ রক্তচাপ
আমেরিকার পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে ৩ জনে ১ জন বা ৭০ মিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে ভোগে। প্রতি মুহূর্তে আপনার হৃদপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছে। হৃদপিণ্ড ধমনীর মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করে। স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা হচ্ছে ১২০/৮০ মিলিমিটার। যখন সিস্টোলিক চাপ ১৪০ বা তার বেশি হয় এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৯০ বা তার বেশি হয় তখন উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে বলা হয়। হৃদরোগের প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বয়স ও ওজন বৃদ্ধির ফলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

৩। উচ্চ কোলেস্টেরল
মোটা মানুষের কোলেস্টেরলের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যখন খারাপ কোলেস্টেরলর LDL বৃদ্ধি পায় ও ভালো কোলেস্টেরলের HDL কমে যায় তখন কোলেস্টেরল সমস্যা সৃষ্টি হয়। কোলেস্টেরলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ২০০৭ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে যে, মোটা মানুষের টেকসই পদ্ধতিতে ওজন কমানোর ফলে HDL এর হ্রাসের বিপরীতে কাজ করে। আরো নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় যে, তুলনামূলক ভাবে ডায়েটের চেয়ে ব্যয়াম করে ওজন কমালে HDL এর স্তর বৃদ্ধি পায়।

৪। হৃদরোগ ও স্ট্রোক
BMI বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। স্থূলতার ফলে করোনারি ধমনীর ভিতরের প্রাচীরে মোমের মত প্লাক জমে। এই প্লাক হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাঁধা দেয়। কারো হৃদপিণ্ডে সমস্যা থাকলে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ, এঞ্জিনা (বুকে ব্যথা) ও অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের মত রোগে ভুগতে হয়। আমেরিকার মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হার্ট ডিজিজ।
স্থূলতার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। স্ট্রোক তখনই হয় যখন মস্তিস্কের কোন অংশের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সেই অংশের কোষ মরে যায়। সবচেয়ে সাধারণ স্ট্রোক হল ইস্কেমিক স্ট্রোক, যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী কোন ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধে তখন এই ধরণের স্ট্রোক হয়। আরেক ধরণের স্ট্রোক হল হেমোরেজিক স্ট্রোক, যখন মস্তিস্কের রক্ত নালী ব্রাস্ট হয় তখন এই ধরণের স্ট্রোক হয়।

৫। ক্যান্সার
কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার (মেনোপজ এর পরে), জরায়ুর ক্যান্সার, কিডনি ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের সাথে স্থূলতা সম্পর্কযুক্ত। কিছু গবেষণায় পিত্তথলির, ডিম্বাশয়ের ও অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের সাথে ওবেসিটির সম্পর্ক আছে বলে জানা যায়।

৬। পিত্তথলির রোগ
মোটা ব্যক্তির পিত্তথলির রোগ ও পিত্তে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি। পরিহাসের বিষয় হল খুব দ্রুত ওজন কমালে বা অনেক বেশি ওজন কমলে পিত্তে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সপ্তাহে ১ পাউন্ড ওজন কমলে পিত্তে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
এছাড়াও অষ্টিও আরথ্রাইটিস, বাত, নাকডাকা, ওবেসিটি হাইপোভেন্টিলেশন সিন্ড্রোম যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি সমস্যাগুলোও অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে।



মন্তব্য চালু নেই