মোবাইলে শেয়ার লেনদেনে সাড়া মেলেনি

পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে এবং বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকঢোল পিটিয়ে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোবাইলে শেয়ার লেনদেন কার্যক্রম চালু করেছে। মোবাইল অ্যাপস চালুর সাত মাস পার হলেও এর প্রতি আগ্রহ নেই ব্রোকারেজ হাউজ ও বিনিয়োগকারীদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইলে লেনদেন চালু হলেও এ পর্যন্ত গঠন করা হয়নি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। অথচ অ্যাপ চালু করে বসে আছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আর এ কারণেই ডিজিটাল যুগেও সাড়া মিলছে না এই অ্যাপসের।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারে ৩২ লাখ বিনিয়োগকারী থাকলেও ২০ লাখের মত সক্রিয়। কিন্তু এ পর্যন্ত মোবাইলে শেয়ার লেনদেনের জন্য রেজিস্ট্রিভুক্ত হয়েছে মাত্র ৪ হাজার জন।

এদিকে মোবাইল লেনদেন তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছর ৬ মার্চ মোবাইল লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করে ডিএসই। অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে মোবাইলে লেনদেনের জন্য মাত্র ৪ হাজার ১৪৪ জন রেজিস্টিভুক্ত। এর মধ্যে ডিএসইতে বিনিয়োগকারী মাত্র এক হাজার ৩১৬ জন, মোবাইল ট্রেডার (সরাসরি যেসব বিনিয়োগকারী শেয়ার লেনদেন করেছে) মাত্র এক হাজার ৮৫৮ এবং ডিএসই মোবাইল ভিআইপি ৯৭০ জন। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত লগইন করেছে ২০ হাজার ১৬২ জন। এ পর্যন্ত যেসব বিনিয়োগকারী মোবাইল লেনদেনে যুক্ত হয়েছেন তা খুবই সামান্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে মাত্র এক লাখ বিনিয়োগকারীকে মোবাইলে লেনদেন ব্যবহারে সুবিধা দেওয়া হবে। পরে ব্রোকারেজ হাউজের চাহিদা মোতাবেক ব্যবহারকারীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। প্রথম পর্যায়ে কোনো ফি নির্ধারণ করা হয়নি। পরে ফি নির্ধারণ করা হবে। আর এ সুবিধা পেতে হলে বিনিয়োগকারীকে ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড নিতে হবে। একজন বিনিয়োগকারী বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে শেয়ার কেনাবেচা করতে পারবেন তার মোবাইলের মাধ্যমে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের ইচ্ছে মত গ্রাহকদের এই সুবিধা দিতে পারবে।

মোবাইলে শেয়ার লেনদেনের বিষয়টি জানতে চাইলে আনিসুজ্জামান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আমি যে হাউজে লেনদেন করি তারা সেবাটি এখনো চালু করে নাই। এছাড়াও এটি কিভাবে পরিচালনা করবো তারও কোনো প্রশিক্ষণ আমাদের দেওয়া হয়নি।

ডিএসইর সদস্য একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা জানান, এখনও পর্যন্ত সব ব্রোকারেজ হাউজে মোবাইল লেনদেন চালু হয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি হাউজে চালু হয়েছে। তাছাড়া মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট কোনা নীতিমালা নেই। মোবাইলে শেয়ার লেনদেনের সময় কখন টাকা পরিশোধ হবে, বিক্রির আদেশ কিভাবে সম্পূর্ণ হবে এরকম বেশ কিছু সমস্যা আছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর পক্ষ থেকে ডিএসইকে বারবার জানানো হয়েছে।
ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইফতেখার উজ জামান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেশের শেয়ার বাজার উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলছে। নতুন বিনিয়োগকারী আসছে না। বাজার ভালো হলে মোবাইল অ্যাপের মত সেবা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ বাড়বে।

আইসিবির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের ডিএসইর সুনির্দিষ্ট কোনা নীতিমালা নেই। মোবাইলে শেয়ার লেদনের সময়, টাকা পরিশোধ, বিক্রিয় আদেশ বিষয়ে বেশ কিছু সমস্যা আছে। ব্রোকারেজ হাউজ গুলোর পক্ষ থেকে ডিএসইকে বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু ডিএসই অ্যাপ চালু করে বসে আছে, বাস্তবায়নের কেনো উদ্যোগ নেই। ভবিৎষতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এ দায়িত্ব কে নিবে।

মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ লেনদেনের নিয়ম অনুসারে মোবাইলে লেনদেন হবে। আর যেসব বিষয় পরিবর্তন করতে হবে তা ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে। এছাড়াও ডিএসইর পক্ষ থেকে অ্যাপ পরিচালনা বিষয়ে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম করা হলেও ব্রোকারেজ হাউজগুলো তেমন সারা দেয় না। আর যদি কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দরকার হয় তাহলে আলোচনা করে তা করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই