মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ বাংলাদেশ

বাংলাদেশে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক ৪৫০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা দি ইকোনমিস্টের ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের একটি সংখ্যার হিসাব অনুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। ওই তালিকায় প্রথম অবস্থানে ছিল কেনিয়া। তখনকার হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে দৈনিক লেনদেন হতো ২৫০ কোটি টাকা। আর আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ২শ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটির বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দিলেও এ সেবা দিচ্ছে ২০টি ব্যাংক।

এই অনুষ্ঠানে আতিউর রহমান আরো জানান, মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে শুরু হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংকগুলো সারাদেশে তাদের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করছে। এই এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রগুলোকে ভবিষ্যতে ই-কমার্স সেন্টারে রুপান্তর করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

আতিউর রহমান বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে দৈনিক সর্বোচ্চ দুবার পঁচিশ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। স্থানীয় মুদ্রায় রেমিটেন্স বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায়, সমাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর অর্থ প্রদান, ইউটিলিটি বিল প্রদানে সহায়তা, ক্লিয়ারিং চেক গ্রহণ, হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন কাজ এ পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে সহজেই। এজেন্ট ব্যাংকিং প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এখন কাজ করছি, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কেন্দ্রগুলোকে ই-কমার্স সেন্টারে রুপান্তর করতে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা বাইরে বসেও দেশে কেনাকাটা করতে পারবেন।’

ইউটিলিটি বিল প্রদানে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরো জোরদার করার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানান গভর্নর। তিনি বলেন, শহরের জন্য এটিকে আরও কার্যকর করতে চাই। যাতে করে মানুষ ঘরে বসে, মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই ইউটিলিটি বিলগুলো পরিশোধ করতে পারে।

মানুষের দুয়ারে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংকে একটি সৃজনশীল সেবা হিসেবে উল্লেখ করেন আতিউর রহমান। তিনি বলেন, আগে মানুষ ছুটতো সেবার পেছনে। দিন বদল হয়েছে। এখন সেবাই খুঁজে বেড়ায় মানুষকে। সত্যিই ব্যাংক এখন জনগণের দুয়ারে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা মানুষের আরো হাতের নাগালে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর আর্থিক সেবা দিতে সক্ষম, এমন শিক্ষিত ব্যক্তি, এমআরএ নিয়ন্ত্রিত এমএফআই, সমবায় সমিতি, পোস্ট অফিস, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির এজেন্ট, বীমা কোম্পানির শাখা, ওষুধের দোকান, চেইন শপ, পেট্রল পাম্প, সিএনজি স্টেশন এবং স্থানীয় সরকারের অফিসগুলো এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবে বলেও জানান তিনি।

সরকারী ও বেসরকারী খাতের মধ্যে একটি পার্টনারশিপ গড়ার কাজ চলছে বলেও জানান গভর্নর। তিনি বলেন, আমরা সরকারী-বেসরকারী খাতের মধ্যে একটি পার্টনারশিপ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে বেসরকারী খাতে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। নতুন একটি ইকোনোমিক ক্লাষ্টারও তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যেক্তারা টাকা পাচ্ছে। কাজ করতে পারছে।

বক্তব্য শেষে গভর্নর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে ছয়টি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়া হলো।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও ‘এক্সেস টু ইনফরমেশন’ প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মুজিবুর রহমান সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।



মন্তব্য চালু নেই