যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টের সম্পদ কত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া যতটাই দুরুহ ব্যাপার তেমনি অনেকক্ষেত্রে এটি প্রশংসনীয় কাজও। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বলেছিলেন, মেঝে পরিস্কার করা এবং বেডপ্যান (রোগী কিংবা বৃদ্ধরা যে প্যানে টয়লেট করেন) পরিষ্কার করা প্রেসিডেন্টের কাজের চাইতে বেশি মর্যাদার।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য রয়েছে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা এবং বেশিরভাগ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সম্পদশালীও হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের গড় সম্পদ বিলিয়ন ডলার, যার পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিকের গড় সম্পদের চাইতে ২০০ গুণ বেশি।

সম্প্রতি ২৪/৭ ওয়াল স্ট্রিটের তৈরি ডাটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের গড় সম্পদের পরিমাণ দিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেছে ইনসাইডগভ.কম। ওই তালিকায় জায়গা, আয়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি এবং বইয়ের আয় যুক্ত করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্টদের সম্পত্তির দিকে লক্ষ্য করলে বেশকিছু লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। প্রথম দিকের প্রেসিডেন্টদের বেশিরভাগই হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করার পূর্বেই সম্পদশালী হয়েছেন এবং তাদের বেশিরভাগই জায়গার (ল্যান্ড এন্ড প্রপার্টি) ব্যবসা করে। কিন্তু সাম্পতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে যে পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিলেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার চাইতে বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন বই বিক্রি এবং বক্তব্য দিয়ে।

সম্পদের পরিমাণ অনুযায়ী (কম থেকে বেশি) তালিকা নিচে দেওয়া হলো।

সবচেয়ে কম সম্পদের মালিক ৯ প্রেসিডেন্ট

তালিকায় থাকা কম সম্পদের প্রেসিডেন্টের তালিকায় (ক্রম ৪৩ থেকে ৩৫) রয়েছেন জেমস বিউকানান, আব্রাহাম লিংকন, ইউলিসিসি এস গ্রান্ট, জেমস গারফিল্ড, চেষ্টার এ. আর্থার, উড্রো উইলসন, কেলভিন কোলিজ, হ্যারি এস. ট্রুম্যান।

এই ৯ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও খুব বেশি পরিমাণ সম্পদের মালিক হননি। তাদের সবার সম্পদ ছিল ১ মিলিয়ন ডলারের চেয়েও কম। মজার বিষয় হচ্ছে, এদের মধ্যে সবচেয়ে কম সম্পদের মালিক ছয়জন প্রেসিডেন্ট ১৮৫৭ থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, সিভিল ওয়ারের সময়কালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াদের জন্য খুব কঠিন সময় গেছে।

অরেন ডি হার্ডিং

রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ২৯তম এই প্রেসিডেন্ট এক মিলিয়ন সম্পদের মালিক ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে তিনি এক স্থানীয় সংবাদপত্রের মালিক ছিলেন এবং সেটাই ছিল তার আয়ের মূল উৎস।

উইলিয়ান ম্যাকিনলি

এক মিলিয়ন সম্পদের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি থেকে জয়লাভ করা যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম এ প্রেসিডেন্টের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যালারি ছাড়া অন্য কোনো আয় ছিল না। র‌্যাংকিংয়ে তার অবস্থান ৩৩তম।

ফ্রাঙ্কলিন পিয়ের্স

যুক্তরাষ্ট্রের ১৪তম এ প্রেসিডেন্ট দুই মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে তালিকার ৩২তম স্থানে অবস্থান করছেন। পিয়ের্স প্রেসিডেন্ট হওয়ার পূর্বে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন এবং হ্যাম্পাশায়ারে তার অনেক জমি ছিল।

উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফট

যুক্তরাষ্ট্রের ২৭তম এ প্রেসিডেন্টের সম্পদের পরিমাণ তিন মিলিয়ন ডলার এবং তালিকায় তার অবস্থান ৩১তম। রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ট্যাফট আগে কাজ করেছিলেন আইনজীবী হিসেবে।

রাদারফোর্ড বি. হেইজ

তিন বিলয়ন সম্পদের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ৩০তম। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত হেইজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।

মিলার্ড ফিলমোর

যুক্তরাষ্ট্রের ১৩তম এ প্রেসিডেন্টের সম্পদের পরিমাণ চার মিলিয়ন ডলার। তালিকায় তার অবস্থান ২৯তম। নিউইয়র্কের তার প্রচুর জমি ছিল।

বেঞ্জামিন হ্যারিসন

২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের সম্পদের পরিমাণ ৫ মিলিয়ন ডলার এবং তালিকায় তার অবস্থান ২৮তম। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত হ্যারিসন সফল আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।

উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন

পাঁচ মিলিয়ন সম্পদের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ২৭-এ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর সম্পত্তি পেয়েছিলেন তিনি। মাত্র ২৩ দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

জ্যাকারি টেইলর

তালিকায় ২৬তম অবস্থানে থাকা সাবেক এ প্রেসিডেন্টের সম্পদের পরিমাণ ছয় মিলিয়ন ডলার। জমির ব্যবসা থেকে প্রচুর টাকা আয় করেছিলেন তিনি।

জিমি কার্টার

সাত মিলিয়ন ডলারের সম্পদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম এ প্রেসিডেন্ট তালিকার ২৫তম স্থানে অবস্থান করছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে সফল বাদাম বিক্রেতা ছিলেন তিনি।

জেরাল্ড ফোর্ড

সাত মিলিয়ন সম্পদ নিয়ে তিনি অবস্থান করছেন ২৪-এ। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত ফোর্ডের মেয়াদকাল থেকে বই লিখে অনেক টাকা আয় করেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা

সাত মিলিয়ন সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান এ প্রেসিডেন্টে ২৩তম অবস্থানে রয়েছেন। তার সম্পদের বেশিরভাগেরই উৎস তার দুই বেস্ট সেলিং বই থেকে।

ডিউইট আইজেনহাওয়ার

রিপাবলিকান দল থেকে জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ২২তম। তার সম্পদের পরিমাণ আট মিলিয়ন ডলার। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

জেমন নক পোক

১০ মিলিয়ন সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ২১তম। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বচিত সাবেক এই প্রেসিডেন্টের প্রচুর জায়গা ছিল।

রোনাল্ড রিগ্যান

যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম এ প্রেসিডেন্ট সম্পদের পরিমাণের দিক থেকে অবস্থান ২০তম। হলিউডের অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। জিই-এর মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন

১৫ মিলিয়ন সম্পদ নিয়ে নিক্সনের অবস্থান ১৯তম। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে জড়িত এই প্রেসিডেন্টকে এক সাক্ষাৎকারে ছয় লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন টকশোর উপস্থাপক ডেভিড ফ্রস্ট।

জন অ্যাডামস

১৯ মিলিয়ন সম্পদের মালিক ছিলেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। পেশায় আইনজীবী ছিলেন এবং বিয়ে করেছিলেন খুব ধনী পরিবারের। আর সেই সূত্রেই প্রচুর সম্পদের মালিক হন তিনি।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ

সম্পদের পরিমাণের তালিকায় তার অবস্থান ১৭তম। ২০ মিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত বুশ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তেলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

জন কুইন্সি অ্যডামস

২১ মিলিয়ন সম্পদের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ১৬-তে। যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত এ প্রেসিডেন্ট আইনজীবী হিসেবে কাজ করে প্রচুর টাকা আয় করেছিলেন।

জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ

২৩ মিলিয়ন সম্পদের মালিকানা নিয়ে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ১৫তম। ছেলের মতো তিনিও তেলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড

২৫ মিলিয়ন সম্পদের মালিক এই প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত ক্লিভল্যান্ড আইনজীবী ছিলেন। এ ছাড়াও করেছেন জায়গার ব্যবসা।

মার্টিন ভ্যান বিউরেন

ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে জয়ী সাবেক এ প্রেসিডেন্টের সম্পদের পরিমাণ ২৬ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম এ প্রেসিডেন্টের প্রচুর জায়গা ছিল।

জেমস মনরো

২৭ মিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে তিনি অবস্থান করছেন তালিকার ১২তম অবস্থানে। আইনজীবী এবং কৃষক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি।

জন টাইলার

৫১ মিলিয়ন সম্পদের মালিক সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ১১তম। তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও বিয়ে করেছিলেন খুব ধনী পরিবারে।

বিল ক্লিনটন

রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে পেশায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করা বিলের সম্পদের পরিমাণ ৫৫ মিলিয়ন ডলার। তালিকায় তার অবস্থান ১০ম।

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট

তালিকায় নবম অবস্থানে থাকা এ প্রেসিডেন্টের সম্পদের পরিমাণ ৬০ মিলিয়ন ডলার। উত্তরাধিকার সূত্রেই প্রচুর সম্পত্তির মালিক হন তিনি।

হার্বাট হুবার

৭৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে তিনি অবস্থান করছেন তালিকার অষ্টম স্থানে। অন্যান্যদের মতো উত্তরাধিকার সূত্রে টাকার মালিক হননি তিনি। হুবার এতিম ছিলেন। তিনি খনি শিল্পে জড়িত হয়ে টাকার মালিক হন।

লিন্ডন বি জনসন

তালিকায় সপ্তম অবস্থানে থাকা সাবেক এ প্রেসিডেন্টের সম্পদের পরিমাণ ৯৮ মিলিয়ন ডলার। টেক্সাসে প্রচুর জায়গা ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক এই প্রেসিডেন্টের।

জেমস ম্যাডিসন

১০১ মিলিয়ন ডলার নিয়ে তার অবস্থান ষষ্ঠ। ভার্জিনিয়ায় চার হাজার একরেরও বেশি পরিমাণ চাষের জমি ছিল তার। সেখান থেকেই এসেছে বেশিরভাগ অর্থ।

অ্যান্ড্রু জ্যাকসন

তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম এ প্রেসিডেন্টের সম্পদের পরিমাণ ১১৯ মিলিয়ন ডলার। সেনাবাহিনীর চাকরি করে পাওয়া অর্থ এবং উত্তরাধিকার প্রচুর সূত্রে পাওয়া জায়গাই ছিল তার সম্পদের মূল উৎস।

থিওডোর রুজভেল্ট

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সম্পদের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান ১২৫ মিলিয়ন ডলার। বই লিখে প্রচুর টাকা আয় করেন তিনি। জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি বই লেখেন তিনি।

থমাস জেফারসন

২১২ মিলিয়ন ডলারের মালিক সাবেক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান তৃতীয়। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর সম্পত্তি পেয়েছিলেন তিনি।

জর্জ ওয়াশিংটন

৫২৫ মিলিয়ন ডলারের মালিক এ প্রেসিডেন্টের অবস্থান তালিকায় দ্বিতীয়। তার আট হাজার একরেরও বেশি জায়গা ছিল।

জন এফ কেনেডি

এক বিলিয়ন সম্পদের মালিক জন এফ কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সম্পদের মালিক। পানীয়, শেয়ার এবং চলচ্চিত্র ব্যবসাসহ বেশি কিছু ব্যবসা থেকে প্রচুর টাকা আয় করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই