যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি নজরদারিতে বিরক্ত মুসলমানরা

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় লাখ খানেক সোমালি বসবাস করেন। এদের বেশিরভাগই নিজের দেশে সংঘাত আর সহিংসতা থেকে বাচতে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এমন তথ্যই জানিয়েছে।

এদের বেশিরভাগই মুসলমান। এ সপ্তাহে মিনেসোটায় সোমালি এক ব্যক্তির হামলা চালানোর ঘটনার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, দেশে মুসলমানদের চালানো সন্ত্রাসী হামলা, কিভাবে ঠেকাবে কর্তৃপক্ষ?

ইউরোপের অনেক দেশের মত যুক্তরাষ্ট্রেও এখন অভিবাসী মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচী। তাদের ওপর নজরদারি যেমন বাড়ছে, তেমনি আলাদা কর্মসূচী নেয়া হচ্ছে যাতে, এই কম্যুনিটির মানুষের মধ্যে শিক্ষা-সচেতনতা বাড়ে এবং প্রবঞ্চনার বোধ না বাড়ে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ ধরণের কর্মকাণ্ডে বেশ বিরক্ত সেখানকার স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় সংগঠক বুরহান মাহমুদ কর্তৃপক্ষের নেয়া নতুন উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন খুনি বা ধর্ষককে ধরার জন্য কি কর্মসূচী নেয় কর্তৃপক্ষ? এখন একটি কম্যুনিটির মানুষকে উদ্দেশ্য করে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, কেন? ব্যাপারটা এমন যে আপনি গুটি কয়েক সন্ত্রাসীকে ধরার জন্য পুরো কম্যুনিটির মানুষকে টার্গেট বানাচ্ছেন। অল্প কয়েকজনের জন্য আমাদের সবাইকে অপরাধী হিসেবে দেখানো হচ্ছে’।

এদিকে বুরহানের মতই ক্ষুব্ধ আর বিরক্ত এখানকার অনেক কিশোর শিক্ষার্থী।

সোমালি শিক্ষার্থীরা স্কুলগুলোতে রীতিমত বৈষম্যের শিকার হয় বলে অভিযোগ করছে। তাদের বেশিরভাগকেই সরকারের বিভিন্ন নজরদারি কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হয়।

সহযোগিতা না পেলে আবার ব্ল্যাকলিস্টেড হবার আশংকা রয়েছে। আর সেই সঙ্গে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও মুসলমান বিরোধী নানা ধরনের বক্তব্য উঠে আসছে।

বুরহান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান গোষ্ঠীর প্রতি তাদের যে মনোভাব, সেটি আপনাকে যত বেশি সম্ভব অ-অামেরিকান করে তুলবে। কারণ এর মাধ্যমে ভয় ছড়ানো হচ্ছে। আর আইসিসও ঠিক এই কাজটাই করছে- তারা বলছে, তুমি যুক্তরাষ্ট্রের কেউ নও, তারা তোমাকে এখানে দেখতে চায় না’।

ঠিক এই মনোভাবই ধ্বনিত হল স্থানীয় রেস্তরাগুলোতে আড্ডা দিতে আসা তরুণদের মধ্যে।

এদের মধ্যে একজন হাইস্কুলের বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড়, জানান দলের বাকি খেলোয়াড়েরা এমন ব্যবহার করে যেন, তারা একজন অপরাধীর সাথে খেলছে। তার মতে, ‘সমস্যা হলো কর্তৃপক্ষের নানা কর্মসূচী আমাদের মধ্যে ভিন্নতার বোধ বাড়াচ্ছে, অর্থাৎ এর মাধ্যমে আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয় আপনি বাইরে থেকে এসেছেন। সে কারণে আমাদের বেশিরভাগই এটাকে হুমকি হিসেবে দেখে। কম্যুনিটির লোকজন এটা পছন্দ করেনা’।

কিন্তু এর বাইরে কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও আছে।

গত এক বছরে সোমালি মুসলমানদের একটি দল কেনিয়ার জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাবে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে। আর আইসিসে যোগ দিতে দেশ ছাড়ার আগে গ্রেফতার হয়েছে নয়জন সোমালি-যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান।

ফলে কর্তৃপক্ষ জঙ্গিবাদ ঠেকাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি এই কম্যুনিটির মানুষের মধ্যে জঙ্গি-বিরোধী বার্তা পৌঁছে দেয়া। আর এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরাই।

এদের একজন সুশিডো শাই জানান, তিনি ২৩ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, মুসলমান হবার কারণে এখনকার মত কখনোই তাকে অসম্মান আর অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়নি।

তিনি বলেন, ‘গত ২৩ বছরে আমাকে কোনদিনই মুসলমান হবার জন্য হুমকির মুখে পড়তে হয়নি, এখন যেমনটা পড়তে হচ্ছে। আমি কল্পনাই করতে পারিনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চান, এমন একজন ব্যক্তি, অন্যকে তার ধর্মের কারণে হুমকি দিচ্ছে। বলছে, মুসলমানেরা এদেশে আসতে পারবেনা, অথবা তাদের ফিরে যেতে হবে’।

সুশিডো বলেন, ‘সরকারী কর্মসূচীতে যারাই কাজ করছেন, তাদের কেউই কাউন্টার টেররিজম কর্মসূচীর ট্যাগ পছন্দ করেনা, কারণ অন্যরা তখন তাকে ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করে’।

কিন্তু এখান থেকে টাকা পাওয়া যায় বলে অনেকেই আগ্রহী হয়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে ঠিক অামেরিকান হয়ে উঠতে পারবেন কিনা সেই সন্দেহ আর আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই