যুগ্ম-সচিবসহ ৫৩ জনকে দুদকে তলব

খাদ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় যুগ্ম-সচিবসহ ৫৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার দুদকের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা হামিদুল হাসান তাদের নিজ নিজ ঠিকানায় পৃথক তলবি নোটিশ পাঠান। দুদকের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

দুদক থেকে পাঠানো নোটিশে তাদের আগামী ২ থেকে ১৫ ডিসেম্বর বিভিন্ন সময়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। তলবকৃতদের মধ্যে ৯ জন নিয়োগ কিমিটি সংশ্লিষ্ট এবং ৪৪ জন খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের তলব করা হয়েছে, তারা হলেন- খাদ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন পরিচালক (প্রশাসন) ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির (ডিপিসি) সভাপতি (বর্তমানে পরিচালক- সংগ্রহ) ইলাহী দাদ খান, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপ-সচিব (বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব) নাসিমা বেগম, সরকারি কর্মকমিশনের প্রাক্তন উপ-পরিচালক ও উপ-সচিব মাহবুবুর রহমান ফারুকী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ইফতেখার আহমেদ, সিনিয়র সহকারী সচিব রোকেয়া খাতুন, ডিপিসির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আইউব আলী, প্রাক্তন সিস্টেম অ্যানালিস্ট আসাদুর রহমান, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আরিফ হোসেন ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেটাবেজ অ্যাডমিন আবুল কাসেম।

অন্যদিকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৪ খাদ্য পরিদর্শক হলেন- শরীয়তপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মো. জহিরুল ইসলাম, সিলেট সদরের অপূর্ব কুমার রায়, সাভারের আবু জাকির মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার আসমা রহমান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আসমা ইসলাম, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জাহানারা জলি, শেরপুরের নয়াবিল টিপিসির অলিউর রহমান, জামালপুর সদর উপজেলার সানজিদা সুলতানা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার উম্মে হানি, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম ভূঞা, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের প্রতাপ কুমার সরকার, পাবনার চাটমোহর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক কোহিনুর আক্তার, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মীর আরিফুর রহমান, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব, ময়মনসিংহের গয়েশপুর উপজেলার মো. সাজ্জাদ হোসেন খান পাঠান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার হিমেল চন্দ্র সরকার, ঢাকা সিএসডির মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন, শেরপুর সদর উপজেলার সালমা আক্তার, জামালপুর এলএসডির শামছুন নাহার, টাঙ্গাইল ঘাটাইলের ইয়াসির আরাফাত, টাঙ্গাইল নাগরপুর উপজেলার মো. এদিব মাহমুদ, পটুয়াখালী গলাচিপা উপজেলার হালিমা আহমেদ, ঝালকাঠি সদর উপজেলার রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার মোহাম্মদ তৈয়ব উল্যাহ খান, নওগাঁ ধামুইরহাট উপজেলার শেখ মো. জাকারিয়া হাসান, নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার মোহাম্মদ নূরুজ্জামান, নওগাঁর পোরশা উপজেলার মো. আতিকুর রহমান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোছা. মমতাজ বেগম, জামালগঞ্জ এলএসডির কানিজ শারমিন, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মো. জুনায়েদ কবীর, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সেলিনা আক্তার, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মোহাম্মদ আলী মিঞা, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মোছা. জাকিয়া সুলতানা, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার অনিমেষ কুমার সরকার, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মোছা. জেসমিন আক্তার, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মো. রায়হান কবির, রংপুর পীরগঞ্জ মিঠাপুকুর টিপিসির মো. শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা দেবহাটার বিল্লাল হোসেন, বাগেরহাট মংলা উপজেলার মো. আবুল হাশেম, পটুয়াখালীর কাঁঠালতলি উপজেলার ইসরাত জাহান মনা, বরগুনা সদর উপজেলার আরিফা সুলতানা, সুনামগঞ্জ দিরাই উপজেলার আশীষ কুমার রায় ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাসিন্দা (চাকরিতে যোগদান করেননি) মো. আবুল কাসেম।

গত ৭ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক বাদি হয়ে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খাদ্য অধিদপ্তরের ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে ৩য় শ্রেণির ১০ ক্যাটাগরিতে (খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক, সুপার ভাইজার, অডিটর, উচ্চমান সহকারী, হিসাবরক্ষক কাম ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপরেটর, সহকারী অপারেটর) ১ হাজার ৫৫২টি শূন্য পদ পূরণের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর পরেই খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খানকে সভাপতি করে ৫ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ পরীক্ষায় নম্বর নির্ধারণ, প্রশ্নপত্র তৈরি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশসহ যাবতীয় কাজ বিভাগীয় নির্বাচন/বাছাই কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি বিভাগীয় নির্বাচন/বাছাই কমিটির সভা শেষে উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাছাই কমিটির সদস্য ও ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বা কম নম্বর পাওয়া ৪৪ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার ওএমআর শিটে জালিয়াতি করে বেশি নম্বর বসিয়ে ৮০ ও তদূর্ধ্ব নম্বর দিয়ে ফল প্রকাশ করে। ওই তালিকায় বিভাগীয় নির্বাচন/বাছাই কমিটির সদস্যদেরও স্বাক্ষর পাওয়া যায়। যেখানে উল্লিখিত ৪৪ জনসহ মোট ৩২৮ জনকে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই