যুগ যুগ আসছে নিম্নমানের গমই

জেনে শুনেই নিম্নমানের গম কেনে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নীতিমালাই এমন। বাংলাদেশে গম আমদানির যে সব শর্ত আছে তাতে আর্ন্তজাতকিভাবে চতুর্থ গ্রেডের গম আনা হয়। গম আমদানির ক্ষেত্রে এই নীতিমালার কারণেই বছরের পর বছর ধরে গম নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে।

চলতি বছর ব্রাজিল থেকে যে দুই লাখ টন গম আমদানি করা হয়েছে, তাও আনা হয়েছে এই নীতিমালায়। আর এই গমের মান নিয়ে প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তোলপাড়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গম নিয়ে এই প্রশ্ন উঠায় আখেরে লাভ হবে দেশবাসীর। কারণ, সমালোচনার মুখে এখন আমদানির নীতিমালা পরিবর্তন করা সহজ হবে। এর আগে একাধিকবার নীতিমালা পাল্টানোর চেষ্টা করা হলেও খরচ বেড়ে যাবে, এই যুক্তি দেখিয়ে তা পাল্টানো হয়নি।

খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচলক সারোয়ার জাহানও নিম্নমানের গম আমদানির বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ড গ্রেডের কিছুটা এদিক সেদিক হলেই সেটিকে নিম্নমান বলা হয়। আমরা এতোদিন যে গম এনেছি হতে পারে নিম্নমানের কিন্তু খাওয়ার অযোগ্য নয়’।

ভোক্তা অধিকারদের সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওধুষ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক গম আমদানির এই নীতিমালার কথা শুনে বিষ্মিত হন। তিনি বলেন, ‘আমার তো ধারণা ছিল ভেজাল খাদ্য নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা উপাদান ব্যবহার বিষয়ক। এখন তো দেখছি মূল সমস্যা অন্যত্র। কম দাম হবে, এই বিবেচনায় নিম্নমানের গম আমদানির বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না কোনভাবেই’।

আ ব ম ফারুক বলেন, ভালো মানের গম আনলে টাকা হয়ত সামান্য বেশি লাগবে, কিন্তু তাতে করে আমার ওষুধের খরচ বেচে যাবে, যেতে হবে ন চিকিৎসকের কাছে, নষ্ট হবে না শ্রমঘণ্টা। এই দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় ভালো মানের খাবারের দাম কিছুটা বেশি হলেও মানুষের খরচ আসলে কমে।

কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান অনুযায়ী ভালো গম আমদানি নিশ্চিত করতে গম আমদানির সংজ্ঞা বা স্পেসিফিকেশনে পরিবর্তন আসছে।প্রস্তাবিত নীতিমালায় দুই শতাংশ জরিমানা দিয়ে বন্দরে চলে আসা নিম্নমানের গম গ্রহণে খাদ্য অধিদপ্তরের বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না।

গত রবিবার খাদ্য অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই প্রস্তাব গ্রহণ হলে গমের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। এর ফলে বাড়বে আটা-ময়দার দাম। তবে বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো এবং ভালো মানের পণ্যের জন্য বাড়তি এই দাম দিতে এখন তেমন সমস্যা হবে না বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

গম আমদানির বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী গমের আপেক্ষিক ওজন প্রতি হেক্টোলিটারে ৭৫ কেজি হতে হবে। অর্থাৎ ১০০ লিটারের সিলিন্ডারে গম ভর্তি করা হলে তার ওজন হবে ৭৫ কেজি। আর যদি ওজন কিছুটা কমও হয়, তার পরও তা গ্রহণ করা হয়। সূত্র জানায়, ব্রাজিল থেকে আনা গমের ওজন ছিল ৭১ কেজি। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জরিমানা দিলে তা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালায় এক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ৭৬ কেজির নিচে হলে জরিমানা দিয়ে গম গ্রহণের পদ্ধতি বাতিল করতে বলেছে অধিদপ্তর।

বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী শস্যদানার সাত শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা গ্রহণ করা হয়। আবার আট শতাংশ ভাঙা থাকলেও তা গ্রহণ করে সরকার। এ ক্ষেত্রেও যথাক্রমে চার ও পাঁচ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।

ভালো গমে অন্য জাতের গমের মিশেল পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত থাকলেও বাংলাদেশ এতদিন তা গ্রহণ করেছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এটাও কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। আবার গমে প্রোটিনের মান ১০ শতাংশ থাকা উচিত হলেও বাংলাদেশ এতদিন গ্রহণ করেছে সাড়ে নয় শতাংশ পর্যন্ত। নতুন নীতিমালায় তা সাড়ে ১২ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী গমে আর্দ্রতা ১৪ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়, যদিও আন্তর্জাতিক মান হচ্ছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই