যেভাবে আলোচনায় আসেন জ্যাকলিন মিথিলা

জ্যাকলিন মিথিলা আত্মহত্যা করেছেন গেল ৩ ফেব্রুয়ারি। তার পিতা এবং চট্টগ্রাম বন্দর থানা পুলিশ সূত্রে খবরটি ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু কে এই জ্যাকলিন মিথিলা? কেনই বা তাকে নিয়ে এতো আলোচনা? তিনি কি শোবিজ অঙ্গনের কেউ? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে যেতে হবে কিছুটা ফ্ল্যাশব্যাকে।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে ভারতীয় অভিনেত্রী ও সাবেক পর্ণ তারকা সানি লিওনের অনুকরণে একটি ফটোশুট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম নজরে আসেন।

এরপর জ্যাকলিন মিথিলার খোলামেলা ছবি ক্রমাগত ছড়াতে থাকে। তারপরেও জ্যাকলিন মিথিলা মূলধারার মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হন।

তার পোস্ট থেকে জানা যায়, তিনি চেয়েছিলেন শোবিজ অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেতে। এজন্য একটি মিউজিক ভিডিওর মডেলও হতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই মিউজিক ভিডিওর খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল।

পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্মাতা পি এ কাজলের `চোখের দেখা` ছবির আইটেম গানে অংশ নেন। তার বিপরীতে ছিলেন শতাব্দী ওয়াদুদ। কিন্তু এতেও গণমাধ্যমের শিরোনাম হতে পারেননি তিনি।

নিজেকে সানি লিওনের ভক্ত হিসেবে দাবি করা জ্যাকলিন মিথিলার আসল নাম জয়া শীল। খোলামেলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে এবং নিজেকে বাংলার সানি লিওন দাবি করা এ মডেলের ফেসবুক ওয়ালে ঢুকে আত্মহত্যা সম্পর্কিত দুটি স্ট্যাটাস পাওয়া যায়।

একটি ৩০ জানুয়ারি রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে দেওয়া। এতে তিনি লিখেন, `কালকে আমি আত্মহত্যা করব। কেউ আমাকে প্রত্যাখান করে নাই। আমিও কাউকে প্রত্যাখান করি নাই। কিন্তু আমি আত্মহত্যা করব। `

আবার ৩১ জানুয়ারি সকাল ৭টা ২৮ মিনিটে লেখেন, `ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে পা বাড়াচ্ছি।` সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনায় থাকা জ্যাকলিন মিথিলার মৃত্যুর পর মূলধারার খবরে চলে আসেন।

জ্যাকলিন জন্মেছেন এবং শৈশব কাটিয়েছেন ফেনীতে। তার পিতা স্বপন শীল পেশায় নাপিত। মায়ের নাম তাপসী শীল। জ্যাকলিনের ভাই-বোন কেউ নেই। কৈশোরের শুরুতে তিনি চট্টগ্রামে চলে আসেন এবং সেখানেই বড় হন।

এরপর ঢাকার খিলগাঁও মডেল কলেজে কিছুদিন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ে বাদ দেন। তারপর শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিকেও পড়েছেন বলে পিতা স্বপন শীল জানান।

কিছুদিন যাবত মিথিলা ফেসবুক `লাইভ`র আকর্ষণে ঝুঁকে পড়েন। তার ফেসবুক লাইভে প্রায় ৫/৬ হাজার ভিউয়ার্স থাকতো। কমেন্ট বক্সে অধিকাংশ মন্তব্যই থাকতো আপত্তিকর।

এদিকে, টানাটানির সংসারেও অভিলাষ জীবন করতেন মিথিলা। বাড়ি চট্টগ্রামে হওয়ায় মিথিলা প্রায়ই বিমানে যাতায়াত করতেন। তার ফেসবুক পোস্ট থেকে এমনটাই জানা গেছে।

কিন্তু মিথিলার আয় কী ছিল? মিথিলার বাবা স্বপন শীল টেলিফোনে জানান, তার পেশা সেলুনে কাজ করা। তিনি বলেন, আমি সেলুনে কাজ করি, তেমন আয় নেই। আমার মেয়ে মিডিয়াতে কাজ করে। তার টাকা দিয়েই আমি চলি। এখন আমার মেয়ে মারা গেছে আমার পথে পথে ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

মিথিলা আত্মহত্যা করায় তার বাবা স্বপন শীল বাদি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থানায় মামলা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, মিথিলার বিয়ে হয় গেল নভেম্বর। স্বামীর নাম উৎপল রায়। স্বামীর বাড়ি ফটিকছড়ি। স্বামীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে তাকে চট্টগ্রামের দিঘিরপাড় নামক জায়গায় চিতায় পোড়ানো হয়েছে।

তবে মিথিলার বাবা জানান, তার মেয়ের সঙ্গে উৎপলের ছয় বছরের প্রেম ছিল। এরমধ্যে মিথিলা ২০১৬ সালে দু`বার অন্তঃসত্ত্বা হয়। এরপর বিয়ে হয় মিথিলার সাথে উৎপলের। মৃত্যুর আগে মিথিলা একটি চিরকুটে তার মৃত্যুর কারণ স্বামীসহ আট জনের নাম উল্লেখ করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই